বেনজীর আহমেদের পরিণতি কি হবে’
নিজস্ব প্রতিবেদক: বেনজীর আহমেদ এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত চরিত্রের নাম। একদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন তার সকল সম্পত্তি জব্দ করেছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে তাকে নিয়ে নেতিবাচক আলোচনা এখন তুঙ্গে। এমনকি সরকারি মহলেও তার তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। এমন একজন লোক এখন খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি বেনজীরের পক্ষ অবলম্বন করছেন। তার দু-একজন ব্যবসায়িক পার্টনার বা একান্ত অনুরাগীরা ছাড়া আর কেউই তার পক্ষে নেই। এমন একটি বাস্তবতায় আজ দুর্নীতি দমন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনে তলব করা হবে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তার বিপুল আয়ের উৎস সম্পর্কে জানার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে তলব করবে বলে জানা গেছে। এছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিদেশ যাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টিও বিবেচনা করছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে।’
এখন বেনজীর আহমেদকে নিয়ে যা হচ্ছে তা হলো ‘পাবলিক ট্র্রায়াল’। সাধারণ মানুষের আদালতে বেনজীর আহমেদ ইতোমধ্যেই দোষী প্রমাণিত হয়ে গেছেন। সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে কোন রকম অনুশোচনা বা সহানুভূতি পাচ্ছেন না। কিন্তু আইনগত প্রক্রিয়া কি হবে? দুর্নীতি দমন কমিশন যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে সেই প্রক্রিয়ায় বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি। শুধুমাত্র তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো কালের কণ্ঠে উত্থাপিত হয়েছিল সেই অভিযোগগুলোর ব্যাপারে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। এই অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে যে তথ্য পাওয়া গেছে তার প্রেক্ষাপটেই সাবেক এই পুলিশ প্রধানের সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে। এখন এটির আইনি প্রক্রিয়া কি’? আইনজীবীরা বলছেন, এর আইনি প্রক্রিয়ার কতগুলো ধাপ রয়েছে।
এখন যেহেতু প্রাথমিক ভাবে দেখা গেছে যে, বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ গুলো উত্থাপিত হয়েছে তার সত্যতা রয়েছে এবং তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল সম্পদ রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান খুব শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি অনুসন্ধান শেষ হয়ে যাওয়ার পর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উপস্থাপন করা হবে। কমিশন এই অনুসন্ধান রিপোর্টের ভিত্তিতে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিবে। অথবা মামলা না করার সিদ্ধান্ত নিবে। তবে এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে এবং বেনজীর আহমেদের ব্যাপারে সরকারের যে মনোভাব তাতে সু-স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে হয়তো মামলা করারই সিদ্ধান্ত নিবে দুর্নীতি দমন কমিশন। মামলা করার পর পরই দুর্নীতি দমন কমিশন এজাহারের বিষয়ে তদন্ত করবে এবং এই তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হলে তারা একটি নির্দিষ্ট থানায় (বেনজীর আহমেদ যে এলাকায় থাকেন, যেখানে তার ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে) মামলা করা হবে।
এবং এ মামলার পরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেনজীর আহমেদকে গ্রেপ্তার করতে পারেন। অথবা আদালতের অনুমোদন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন।’ এক্ষেত্রে দু’রকমের অবস্থানই দেখা গেছে, যদি থানায় মামলার পরপরই বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা নাও হয় সেক্ষেত্রে চার্জশিটের পর তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে। এর আগেও দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে। এরপর মামলার বিচারপ্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হবে।
এবং সেখানে বেনজীর আহমেদ আত্মপক্ষ সমর্থনের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের যে মামলার প্রক্রিয়া তা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এমনকি ২০০৬-২০০৭ সালে যে মামলা হয়েছিল সে মামলারই এখন অনেকগুলোর বিচার সম্পন্ন হয়নি। মির্জা আব্বাস, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সহ অনেকের মামলায় দীর্ঘদিন ঝুলে আছে। কাজেই, আইনের আদালতে বেনজীর আহমেদ কতদিনে দোষী প্রমাণিত হবে সেটা জানা যাবে ভবিষ্যতে। তবে বেনজীর আহমেদ যে জনতার আদালতে ইতোমধ্যেই দোষী প্রমাণিত হয়েছে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।