সংবাদের আলো ডেস্ক: পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের পার্টনারদের খোঁজ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দেশে-বিদেশে বেনজীর আহমেদের সঙ্গে যারা বিভিন্নভাবে অংশীদার এবং ব্যবসায়িক পার্টনার রয়েছেন-তাদের তদন্তের আওতায় আনা হবে। দুদকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, ধাপে ধাপে সবকিছু তদন্ত করা হবে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু নাম পাওয়া গেছে। তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সময় হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেনজীরের অগাধ সম্পদের তদন্ত করতে গিয়ে তার অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের হদিস মিলেছে। দুবাইকেন্দ্রিক ব্যবসার অনুসন্ধান করতে গিয়ে তার কয়েকজন পার্টনারের সন্ধান পাওয়া গেছে। লন্ডনেও তার দু-একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী রয়েছেন। চাকরিতে থাকা অবস্থায় তিনি একাধিকবার সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন।সেসব দেশে তার ব্যবসার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। দুবাইয়ে তার হোটেল ব্যবসার বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। সেখানেও রয়েছে ব্যবসায়িক অংশীদার। বন বিভাগের জমি দখল করে গড়ে তোলা গাজীপুরে ভাওয়াল রিসোর্টের পার্টনারের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। গুলশানসহ বিভিন্ন স্থানে তার ল্যান্ড ব্যবসার সঙ্গে একাধিক পার্টনারের সন্ধান মিলেছে। মিডিয়া এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত তার পার্টনারদের তদন্তের আওতায় নেওয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, কক্সবাজার, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া ছাড়াও সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে তার জমির সন্ধান পাওয়া গেছে।' ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, সাবেক আইজিপির দুর্নীতির সহযোগীদেরও অবশ্যই তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
তিনি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে সম্পদের বিকাশ ঘটিয়েছেন এটি একা করেননি। যোগসাজশে করেছেন। তিনি যে সম্পদ এবং অর্থ উপার্জন করেছেন, সেটি ক্ষমতার অপব্যবহারেই করেছেন তা পরিষ্কার। এক্ষেত্রে তিনি তার প্রাতিষ্ঠানিক এবং পেশার অবস্থানকে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু তিনি এটা এককভাবে করেননি। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতায় করেছেন সেটি নয়, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়ও করেছেন। তার সঙ্গে অনেক যোগসাজশকারী ছিল, সহকারী ছিল এবং অংশীজন ছিল। অনেক ক্ষেত্রে সুরক্ষাকারী ছিল। যারা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিল এমন ব্যক্তিবর্গও ছিল। সত্যিকার অর্থে যদি তার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হয়, তাহলে তার সহযোগীদেরও এর মধ্যে আনতে হবে। অবশ্যই তাদের দায়ী করতে হবে। কিন্তু তার সহযোগীদের বাদ দিয়ে সত্যিকার জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে না এবং ন্যায়বিচার হবে না।
এরই মধ্যে বেনজীর আহমেদ সপরিবারে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে তথ্য জানা যাচ্ছে। দুদক সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে বিদেশেও তার সম্পদ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে দুদক। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ অনুসন্ধানের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। অনুসন্ধানে এসব দেশে সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেলে শুরু হবে পরবর্তী কার্যক্রম।
এক্ষেত্রে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্টের (এমএলএআর) আওতায় তথ্য চেয়ে চিঠি দেবে সরকার। তার ভিত্তিতে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনাসহ বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। উল্লেখ্য, দুর্নীতি দমন কমিশন আগামী ৬ ও ৯ জুন বেনজীর আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে তলব করেছে। কিন্তু এই দুই দিন বেনজীরের পরিবারের সদস্যরা দুর্নীতি দমন কমিশনে আসবে কি না তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2024 সংবাদের আলো. All rights reserved.