নিজস্ব প্রতিবেদক: সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের সঙ্গে তারেক জিয়ার যোগাযোগের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। একাধিক গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে, সাবেক পুলিশপ্রধান অবসর গ্রহণের পর অন্তত একবার তারেক জিয়ার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করেছেন। এছাড়াও তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি আব্দুল মালেকের সঙ্গে তার একাধিক কথোপকথনের তথ্য এখন গোয়েন্দাদের হাতে। বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে যেন বেনজীরের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের ওপর বিরূপ আচরণ না করে এবং বেনজীর আহমেদকে যেন কোন রকম হেনস্থা না করা হয়, সে কারণেই তারেক জিয়াকে বেনজীর আহমেদ বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়েছিলেন বলেও দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র ধারণা করছে। তবে গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত অনুসন্ধান করতে হবে।সেই অনুসন্ধানের কাজ চলছে। উল্লেখ্য যে, বেনজীর আহমেদ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে পুলিশ প্রধানের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তিনি অবসর জীবনযাপন করছিলেন। ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল বেনজীর আহমেদ যুক্তরাজ্য সফর করেন। তার কন্যা সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে- এই কারণে তিনি, তার স্ত্রী এবং আরেক কন্যাসহ যুক্তরাজ্যে যান। যুক্তরাজ্যে তিনি এক মাস অবস্থান করেছিলেন এবং এই এক মাস অবস্থানকালে অন্তত একবার তারেক জিয়ার সঙ্গে তার দেখা হয়েছে। একাধিক গোয়েন্দা সূত্র বলছে, লন্ডনের স্ট্রেটফোর্ড এলাকায় বেনজীর আহমেদ এবং তারেক জিয়ার সাক্ষাৎ হয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে। এই স্ট্রেটফোর্ড এলাকায় হাট হাউজ বলে একটি আবাসিক হোটেল রয়েছে, যে হোটেলটি ওয়েস্টফিল্ড শপিংমলের খুব কাছাকাছি।
এখানেই কোন একটি জায়গায় তাদের বৈঠকের কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য একাধিক সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির হাতে আছে।' এ বছর জানুয়ারি মাসে নির্বাচনের পরপরই এই তথ্যগুলো পেতে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আরও বলছে, বেনজীর আহমেদ এই সাক্ষাৎ ছাড়াও টেলিফোনে একাধিকবার যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি আব্দুল মালেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আব্দুল মালেক তারেক জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ট ব্যক্তি। বাংলাদেশ থেকে যে সমস্ত অর্থ পাচার হয়ে তারেক জিয়ার কাছে যায়, সে সমস্ত অর্থ তারেক জিয়ার কাছে পৌঁছে দেওয়ার মূল দায়িত্বটি পালন করে থাকেন এই আব্দুল মালেক। আব্দুল মালেকের সঙ্গে বেনজীরের অন্তত ১৭টি কল রেকর্ডের তথ্য প্রাথমিকভাবে পাওয়া গেছে। তবে এই সমস্ত আলাপ আলোচনায় কী হয়েছে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়নি।
বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে বিএনপি বড় ধরনের আন্দোলন শুরু করে এবং সেই সময় বিএনপির আন্দোলনে একটি জোয়ারের ভাব লক্ষ্য করা গিয়েছিল। এই সময় অনেকেই বিএনপির সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ শুরু করেছিলেন। বিশেষ করে যে সমস্ত ব্যবসায়ী অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ বিত্তের মালিক হচ্ছেন, যারা বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন, তারা তারেক জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেন। মূলত এদের লক্ষ্য ছিল যদি কোন কারণে সরকার বিপদে পড়ে এবং দেশে একটি অন্যরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে যেন তারেক জিয়া তাদেরকে রক্ষা করেন। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি একটি প্রভাবশালী অবস্থানে এসেছিল।
এই সময় বেনজীর আহমেদের মতো অনেক দুর্নীতিবাজই লন্ডনে যোগাযোগ শুরু করেছিলেন এবং তারেক জিয়াকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য যে, তারেক জিয়ার দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্তত ৮টি দেশে বিপুল সম্পদ রয়েছে। এ সমস্ত দেশ থেকে লন্ডনে অর্থ পাঠানো কোন জটিল বিষয় নয়।' বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, সরকার যে এখন বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অনমনীয় এবং কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে তার অন্যতম কারণ হলো বেনজীরের সঙ্গে তারেক জিয়ার কানেকশন।
বেনজীর তার নিজের অবৈধ সম্পদ রক্ষার জন্য তারেক জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এটি নিশ্চিত। তবে তিনি তারেক জিয়াকে ঠিক কী পরিমাণ অর্থ চাঁদা বা ঘুষ দিয়েছেন সে সম্পর্কে আরও বিস্তারিত অনুসন্ধান প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সে সময় বেনজীর আহমেদ অন্য দুর্নীতিগ্রস্তদের মতো মনে করেছিলেন যে, আওয়ামী লীগের হয়তো পতন ঘটবে। এ কারণেই তারেক জিয়ার প্রতি ঝুঁকেছিলেন বেনজীর আহমেদ।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2024 সংবাদের আলো. All rights reserved.