বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা: সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রায় এক মাস হতে চলল বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে গতকাল এ ব্যাপারে আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে সাংবাদিকরা কেন প্রবেশ করবে না বাংলাদেশ ব্যাংকে, তার কোন যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়নি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে। যখন আর্থিক খাতে নানা রকম বিশৃঙ্খলা, ব্যাংক একীভূত করা নিয়ে তালগোল পাকাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক, ডলার নিয়ে চলছে তেলেসমাতি কারবার; তখন বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা নানা রকম গুজবকে উস্কে দিচ্ছে। এর ফলে সংবাদমাধ্যমগুলোতে আর্থিক খাত নিয়ে নানা রকম নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হচ্ছে এবং এই সমস্ত খবরগুলো সরকারের ইমেজ নষ্ট করছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
সরকারের নীতি নির্ধারক মহলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একলাফে ডলারের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া, সুদের হারের নিয়ন্ত্রণ উঠিয়ে দেওয়া কিংবা ব্যাংক একীভূতকরণ; সবগুলো নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এক লেজেগোবরে অবস্থায় চলে গেছে। এই পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের কাছে প্রকৃত পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা এবং প্রত্যেকটি কাজের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করাটা জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক অদৃশ্য কারণে সে পথে হাঁটছে না। এই না হাঁটার ফলে নানা রকম গুজব এবং নেতিবাচক সংবাদ উস্কে দেওয়া হচ্ছে। কদিন আগেই রিজার্ভ চুরি নিয়ে এক গুজব ছড়ানো হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই তথ্য নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল, বাংলাদেশ ব্যাংকে যখন গণমাধ্যমের অবাধ প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তখন মানুষ গুজবকে বিশ্বাস করা শুরু করেছে। যেকোন একটি প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকার তথ্য অধিকার আইন করেছে। এদেশের প্রধানমন্ত্রী গণমাধ্যমবান্ধব।
তিনি যে কোন বিদেশ সফর করে এসে সংবাদ সংবাদ সম্মেলন করেন এবং এই সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের সঙ্গে সব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যদি গণমাধ্যমের জন্য অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করেন, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক কেন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে? বর্তমান সরকার গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। বিশেষ করে টকশোগুলোতে সরকার বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং ব্যক্তিরা এসে নানা রকম সমালোচনা করছে এবং এই সমস্ত সমালোচনা কোনরকম সেন্সরশিপ ছাড়াই করা হচ্ছে। সরকারের যখন এই অবস্থান তখন বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত। তাহলে কি বাংলাদেশ ব্যাংকে কোন ভূত আছে? যারা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট, সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করার জন্য কাজ করছে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় এক মাস ধরে এই পদক্ষেপের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকার। দেশে অর্থনৈতিক সংকট রয়েছে, এ কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
আর এ রকম একটা বাস্তবতায় বাংলাদেশ ব্যাংক গণমাধ্যমকে কোন তথ্য দেবেন না, গণমাধ্যম বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারবে না-এটি এটির পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। অনেকেই মনে করছেন, কেউ কেউ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভিতরে থাকা কোন ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে এই সব ঘটনা ঘটাচ্ছে। এতে যেন সরকারের ইমেজ ক্ষুন্ন হয়, গুজব ছড়ানো সহজ হয় এবং অসত্য মিথ্যা তথ্য যারা পরিবেশন করছে তাদেরকে উস্কে দেওয়া হয়। অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে কোন তথ্যই গোপন রাখা যায় না। বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে কোন তথ্য গোপন করতে পারেনি। তারা ডলারের দাম বৃদ্ধির আগেই সব খবর প্রকাশ করেছে। স্ক্রলনীতির সংবাদ বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণার আগেই প্রকাশিত হয়েছে। কাজেই বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এভাবে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তাহলে সরকারই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সরকারকে ক্ষতিগ্রস্থ করার জন্যই কী বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন কোন মহল সক্রিয়’।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।