জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: যমুনা নদীর ওপর দেশের মেঘা প্রকল্প দীর্ঘতম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে সেতুটি পুরোপুরি দৃশ্যমান। এ কাজের সাথে অংশবিশেষ মিউজিয়াম কনস্ট্রাকশন কাজটি না করার কারণে ৫০ কোটি টাকা ফেরত যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। চলতি নভেম্বর মাসেই সেতুর উপর দিয়ে পরীক্ষামুলক ট্রেন চলাচলা করার কথা রয়েছে।সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে সেতুর উপর দিয়ে ট্র্রেন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।তবে এটি চালু হলেও ট্রেনের পূর্ণগতি ফিরতে সময় লাগবে আরো দু’মাস। জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়।তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতিসীমা।বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হচ্ছে।এতে সময় অপচয়ের পাশাপাশি শিডিউল বিপর্যয় দেখা দেয়।এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।যমুনা সেতুর ৩০০ মিটার উজানে চলছে স্টিল অবকাঠামোর নতুন ডাবল ট্র্যাকের ডুয়েলগেজ লাইনের সেতুটির অবকাঠামো নির্মাণকাজ।এরই মধ্যে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারের অবকাঠামো নির্মানের সকল কাজ সর্ম্পন্ন হয়ে রেল সেতুটি পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে।এ সেতুর কাজ শেষ হলে ট্রেন চলবে ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে।সেতুটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে জাপানি কোম্পানি ওটিজি ও আইএইচআই জয়েন্টভেঞ্চার।প্রতিষ্ঠান দুটি পৃথকভাবে সেতুর পূর্ব ও পশ্চিমে ভাগ করে কাজ করছে। শনিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান জানান, সেতুটির অবকাঠামো নির্মাণের শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে।চলতি মাসের ২৭ অথবা ২৮ নভেম্বর সেতুটির উপর দিয়ে পরীক্ষামুলক ট্রেন চালানোর জন্য সিদ্ধান্ত হাতে নেয়া হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এটির উদ্বোধন করা হবে আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে। ইতিমধ্যেই রেল সেতুটি উদ্বোধনের জন্য সকল প্রক্রিয়া কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ ছাড়া সেতুর দুইপাশের ১৩ কিলোমিটার রেললাইনের কাজও শেষ হয়েছে। সেতুর কাজের অংশবিশেষ মিউজিয়াম কনস্ট্রাকশন কাজটি না করার কারণে সেতুটি নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয়ের থেকে ৫০ কোটি টাকা ফেরত যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, এ রেল সেতুটি খুলে দেয়া হলে সবচেয়ে বড় সুবিধা হবে সময় সাশ্রয়। ফলে ট্রেন যাত্রীদের আর বিরম্বনায় পড়তে হবে না। সহজে কম সময়ে যমুনা নদী পাড়ি দিতে পারবে ট্রেন যাত্রীরা। যমুনা নদীতে বর্তমান যমুনা সেতুটি বিপজ্জনক হওয়ায় একটি ট্রেন পার হতে প্রায় ৩০ মিনিটের বেশি সময় নেয়। ফলে অন্যন্যা ট্র্রেনকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। যদি এই সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চালাতে দেয়া হয়, তাহলে মাত্র ৫ মিনিটেই ৪.৮ কিলোমিটার যমুনা নদী পার হওয়া যাবে। ফলে সময়ও কম লাগবে ট্রেন যাত্রীদের দূর্ভোগ কম হবে। এছাড়াও মালবাহী ট্রেনও সেতু দিয়ে সহজে পারাপার হতে পারবে। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প ডব্লিউডি-১ এর মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব আলম বলেন, সেতুটির অবকাঠামো নির্মাণ কাজ এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তবে ভারত থেকে প্রযুক্তিপণ্য আমদানিতে একটু জটিলতার কারণে সেতুর দুই পাশের স্টেশনে শুরু থেকে কম্পিউটার ভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা বা কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম (সিবিআইএস) চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে জানুয়ারিতে সেতুটি চালু হলেও পূর্ণগতি অর্থাৎ ১২০ কিলোমিটার বেগ পাওয়া যাবে না। চালু হওয়ার ঠিক দুই মাসের মধ্যে সেতুর দুপাশে সিবিআইএস সংযুক্ত করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান। রেলওয়ে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু নির্মাণে প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এর মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়। এতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা দাঁড়ায়। এর মধ্যে দেশীয় অর্থায়ন ২৭.৬০ শতাংশ। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। যা প্রকল্পের ৭২.৪০ শতাংশ। এ প্রকল্পের মূল নির্ধারিত সময় ছিল জুলাই ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩। কিন্তু প্রথম সংশোধনে এ সময়সীমা আরো বাড়ানো হয়। এরআগে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি সেতুটির নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর ২০২১ সালের মার্চে রেল সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2024 সংবাদের আলো. All rights reserved.