মামুন শেখ: আগামীকাল চৌদ্দ জানুয়ারি পৌষ মাসের শেষ দিন। পৌষ সংক্রান্তি এর এই দিনই পালিত হয় পুরান ঢাকার এবং আদি ঢাকাইয়াদের ঐতিহ্যের সাকরাইন উৎসব যা অনেকের কাছে ঘুড়ি উৎসব নামে পরিচিত। ভোরবেলা কুয়াশার আবছায়াতেই ছাদে ছাদে শুরু হবে ঘুড়ি ওড়ানো উম্মাদনা। ছোট বড় সকলের অংশগ্রহণে মুখরিত থাকবে প্রতিটি ছাদ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়বে উৎসবের জৌলুস। আর শীতের বিকেলে ঘুড়ির কাটা-কাটি খেলায় উত্তাপ ছড়াবে সাকরাইন উৎসব।
এক দশক আগেও ছাদে থাকতো মাইকের আধিপত্য। আজ মাইকের স্থান দখল করেছে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম। উৎসবের আমেজ থাকবে পুরান ঢাকার সর্বত্র। আকাশে উড়বে ঘুড়ি আর বাতাসে দোলা জাগাবে গান। মাঝে মাঝে ঘুড়ি কেটে গেলে পরাজিত ঘুড়ির উদ্ধেশ্যে ধ্বনিত হবে ভাকাট্টা লোট শব্দ যুগল। বর্তমানে পুরান ঢাকায় সাকরাইন উৎসব সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে ছোট-বড় সবাই মেতে ওঠে এই উৎসবে।
ঢাকা সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুশফিকা রহমান সিলভী বলেন, সাকরাইন শব্দটি শুনলেই সর্বপ্রথম মনে পড়ে রঙ-বেরঙের ঘুড়ির কথা। সাকরাইন এখন পুরান ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এর আবির্ভাব কীভাবে ঘটেছে তা আমার জানা নেই, তবে তরুণ সমাজের কাছে এই উৎসবটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই সময়ে রঙ-বেরঙের ঘুড়ি উড়ানো হয়। এবারো তার ব্যাতিক্রম হবে না। এই সময় আকাশের দিকে তাকালে মনে হয় ঘুড়ির মেলা। আকাশ রঙ-বেরঙের ঘুড়িতে সেজে উঠে। এই দৃশ্যটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও মনোরম। এই সময়ে ঘুড়ি ও নাটাই এর দাম সাধারণ দামের চেয়েতে দ্বীগুণ হয়ে যায়। ঘুড়ির দাম হয়ে যায় আকাশ ছোঁয়া। তখন ঘুড়ি ও নাটাই বিক্রেতারা অনেক লাভবান হয়। এছাড়া রাত্রে গান-বাজনা ও বাজি ফুটানো হয়। অনেকে আবার আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় যায়। আমার জন্যও এসবের ব্যতিক্রম নয়। সাকরাইন অন্যদের মতো আমারো একটি পছন্দের উৎসব।
বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজানা ইসলাম বলেন, এ উৎসবকে ঘিরে পুরান ঢাকার কিশোর-কিশোরীরা অনেক আগেই ঘুড়ি-নাটাই ও ধারালো সুতা সংগ্রহ করেছে।
এই উৎসব আমাদের জন্য অনেক স্পেশাল। ছোটবেলা থেকেই অনেক আনন্দের সঙ্গে আমরা এই উৎসব পালন করে আসছি। এই দিনে আমরা আত্মীয়স্বজনদের বাসায় ঘোরাফেরা করি। বিকালে ঘুড়ি ওড়াই। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বাসার ছাদে গান-বাজনা করে পার্টি করি।
পুরান ঢাকার তরুণরা সারা বছর এই ঘুড়ি উৎসবের অপেক্ষায় থাকে। সাকরাইনে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত না খেয়ে থাকেন। আর মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা দিনটিতে সকালে পিঠা, বাকরখানি মোয়াসহ নানা ধরনের খাবার বিলি করেন প্রতিবেশীদের মাঝে।
এবার সাকরাইন পালিত হবে রবিবার (১৪ জানুয়ারি)। সপ্তাহের পূর্ণ কর্মদিবস হলেও দুপুর থেকে জমে উঠবে উৎসবের মূল আয়োজন। দিনভর ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি সন্ধ্যার পর বাসার ছাদে বাজবে ডিজে গান। তরুণরা মুখে আগুনের ফুলকি ছুড়বে, মেতে উঠবে উৎসবে। পুরান ঢাকার অনেক স্থানীয় বাসিন্দা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করলেও তারাও এই দিনকে কেন্দ্র করে সাকরাইন উৎসবে অংশ নেন। সবার মধ্যে এক ধরনের উৎসবের আমেজ কাজ করে।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2024 সংবাদের আলো. All rights reserved.