শুক্রবার, ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

পিলখানা হত্যাকাণ্ড: ১৬ বছর পর কারামুক্তি, পরিবারকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত মুসা

সংবাদের আলো ডেস্ক: আলোচিত পিলখানা হত্যাকাণ্ডে দীর্ঘ ১৬ বছর কারাগারে থাকার পর বাড়ি ফিরেছেন পটুয়াখালী বাউফলের মুসা হাওলাদার। জামিনে মুক্তি পেয়েই বৃহস্পতিবার (২৩জানুয়ারি) মায়ের কোলে ফিরেছেন বিডিআরের তৎকালীন ল্যান্স নায়েক মুসা হাওলাদার। মুসা হাওলাদার কনকদিয়া ইউনিয়নের উত্তর কনকদিয়া গ্রামের রহমান মাষ্টার বাড়ির মফিজ উদ্দিন হাওলাদার ছেলে। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় ।

দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর মুক্ত হয়ে ফিরে আসায় মুসার বাড়িতে চলছে আনন্দ উৎসব। অসুস্থ ৯৮ বছর বয়সের বাবা ও ৮৫ বছর বয়সের মা তাকে পেয়ে যেনো অলৌকিকভাবে সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। তাকে এক পলক দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে আত্মীয়রাও।অতিদরিদ্র ও সাধারণ পরিবারের সন্তান মুসা ১৯৮৮ সালে তৎকালীন বিডিআরে যোগ দেন। পরিবারে মুসা হাওলাদারই ছিলেন একমাত্র সরকারি চাকরিজীবী। বিডিআরে চাকরি করে ভাই-বোনদের লেখাপড়া করিয়েছেন ও পরিবারের পাশে দাড়িয়েছেন।

বিডিআরে যোগদানের ২১ বছর পরে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে কারাবন্দি হন তিনি। বিদ্রোহী, সিভিল ও বিস্ফোরক আইনে মামলায় জেল খাটেন দীর্ঘ ১৬টি বছর। মুসার স্ত্রী ও দুই ছেলে সন্তান আছেন। তার ভাইদের সহযোগিতায় লেখাপড়া করছেন তার সন্তানরা। বড় ছেলে মহিউদ্দিন (২০) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানীতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করেন। ছোট ছেলে মারুফ (১৭) একটি কামিল মাদরাসায় লেখাপড়া করেন।

গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে মুসা হাওলাদার বলেন, বিনা অপরাধে দীর্ঘ ১৬ বছর কারাগারে ছিলাম। দেড় যুগ পর বন্দী জীবন থেকে মুক্ত হয়ে পরিবারের কাছে ফেরার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। কলিজার টুকরা বাবা ও সন্তানের সাথে একসাথে নামাজ পড়তে পারায় আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। দুনিয়ার ভেতরে সবচেয়ে উত্তম উপহার পেয়েছি আমি- আমার বাবা ও মা আমার সবকিছু। তারা দুজনেই বৃদ্ধ, প্রায় সময় খুবই অসুস্থ থাকে। ঠিকঠাক ভাবে হাটা চলা করতে পারেনা। তাদের পাশে থাকবো এটাই সবচেয়ে বড় আনন্দ আমার।

মুসা হাওলাদার আরও বলেন, আমি যখন জেলে যাই তখন আমার বড় ছেলের বয়স তিন বছর ও ছোট ছেলের বয়স এক বছর। আমি প্রতিটি মুহুর্ত খুব কষ্টের ভিতর ছিলাম। যখন পরিবারের কথা মনে হত নিজেকে সামলাতে পারতাম না। আমার অনেক অর্থ সম্পদ নেই কিন্তু একটি চমৎকার পরিবার আছে। তারাই আমার সম্পদ। আমি যেমন আমার ভাইদের আগলে রেখেছিলাম তেমনই তারাও আমার সন্তানদের যত্ন নিয়েছে। আমার দুই ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করেছে।

পিলখানার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনা এই সরকার, দেশের জনগণ ও বিশ্ব জানতে পেরেছে। কিভাবে এ ঘটনা ঘটেছে তা এখন পরিষ্কার। আমার ওপর অন্যায় ভাবে দোষ চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। ঘটনার দিন আমার ডিউটিও ছিল না। আমার জীবন থেকে যে সময় হারিয়েছে তা কেউ ফেরত দিতে পারবে না। আমি রাষ্ট্রের কাছে প্রত্যাশা রাখি, আমার উপার্জন যা নষ্ট হয়েছে সেই হক আমাকে অবশ্যই ফিরিয়ে দেয়া হবে।

ছাত্রসমাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সাবেক এই বিডিআর সদস্য বলেন, ছাত্রসমাজ যদি এগিয়ে না আসতো তাহলে আমরা হয়তো কখনও কারামুক্ত হতে পারতামনা। কারাগারে এখনও নির্দোষ যে বিডিআরের সদস্য রয়েছে তাদের মুক্তির দাবিও জানান মুসা হাওলাদার।

মুসা হাওলাদার ছোট ছেলে মারুফ বলেন, বুঝতে শেখার পর থেকেই বাবাকে কাছে পাইনি। বাবার আদর ভালোবাসা কেমন হয় বুঝতে পারিনি। প্রথমবার বাবাকে কাছে পাওয়াই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার। বাবার সাথে নামাজ আদায় করতেছি, আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। আমার জীবনে আর কোনো চাওয়া পাওয়া নেই।

তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বলেন, মুসার ওপর জুলুম হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন বিডিআর সদস্যরা। পিলখানা ঘটনার পরে মানুষের কাছ থেকে অনেক কথা শুনেছি। মানুষ বলতেন মুসা অনেক বড় অপরাধী। তাই তিনি জেল থেকে ছাড়া পায় না। আমরা একটা মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে ছিলাম। যা কখনও ভুলে যাওয়া সম্ভব না। মুসা হাওলাদারের কারামুক্তিতে পরিবারের পাশাপাশি আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো গ্রামে। অনেকেই মুসার সাথে দেখা করে বিভিন্ন স্মৃতিমুখর ঘটনা নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠছে।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়