বৃহস্পতিবার, ২৪শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

পরিবারের দাবী বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত্যু, পলাতক শ্রমিক লীগ নেতা

উজ্জ্বল অধিকারী: সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সুবর্ণসাড়া গ্রামে গত ১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান এলাকাবসী। এতে মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চার দিকে।  পরে এলাকাবসী খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, শব্দের উৎস ওই গ্রামের শ্রমীক লীগ নেতা মোতালেব সরকার সরকারবাড়িতে।  এ নিয়ে গত পাচদিন যাবৎ চলছে নানা গুনজন। বিস্ফরণের মূল কারন জানা গেলো শনিবার সকালে। সেদিনের সেই বিস্ফরণের আহত হন দুই জন। তাদের একজন ফজলুর হক ফজলু ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
এর পর পরিবারের পক্ষ থেকেই জানানো হয় ঐ দিন দুপুরে শ্রমীকলীগ নেতার বাসায় বোমা তৈরির সময় হঠাৎ বিস্ফরণ হয় একটি বোমা।  আর সেই সময় গুরুতর আহত হয় ফজলু ও জিন্নাহ। সেদিন শ্রমীকলীগ নেতা মোতালেব দ্রুত তাদের দুজনকে গাড়ীতে করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে ভর্তি করলে।  পরে শনিবার ভোর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ফজলুল হক ফজলু।
সরকারবড়ীর শ্রমীকলীগ নেতা মোতালেব এলাকায় সংসদ সদস্য ও বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নৌকা মনোনিত আব্দুল মোমিন মন্ডলের একান্ত আস্থাভাজন বলে গুনজন রয়েছে।বেলকুচি – চৌহালী এ আসনে এবার নৌকা প্রতিকের বিপরীতে দুই জন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। স্থানীয় দের ধারণা নির্বাচনে এ সকল  বিস্ফরণ ব্যবহার করার জন্যই এ বোমা তৈরী করা হয়ে থাকতে পারে।
যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে বিস্ফরণের ব্যাপারে তেমন কোন তথ্য দেওয়া হয়নি এখনো। ঘটনা সেদিন আসলেই কি বিস্ফরণ হয়েছিলো তা নিয়েও পষ্ট কোন তথ্য দেওয়া হয়নি। ঐ দিন ঘটনার পর এলাকার উৎসুক জনতা সেখানে জড়ো হলেও বাড়িটিতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে এলাকায় রহস্য দেখা দেয়। ঘটনার দিন দুপুর দেড়টা থেকে পৌনে ২টার মধ্যে শব্দ শুনতে পান বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
তারা ছুটে গিয়ে দেখে ঘটনার পরপরই কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে দু’জন পুরুষকে আহত অবস্থায় সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারা ধারণা করে বোমা বা ককটেলজাতীয় কিছু তৈরির সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেদিন রাতেই  পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সুবর্ণসাড়া গ্রামে তদন্ত করেছেন। তবে কোনো কূলকিনারা পাননি তারা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা বেলকুচি থানার এসআই শিমুল মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সুবর্ণসাড়া গ্রামের মজনু সরকার বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে যে বিকট শব্দ শুনেছি  আমরা দৌড়ে গেলে সরকার বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করতে দেয় না। আমরা আর কিছু দেখতে পাইনি।
এবিষয়ে গত  বৃহস্প্রতিবার সকালে মোতালেব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নৌকার সমর্থক। প্রচারে ছুটে বেড়াচ্ছি। মঙ্গলবার দুপুরে রান্নার সময় বাড়িতে ব্যবহৃত প্রেশার কুকারটি হঠাৎ বিস্ফোরিত হয়।’ তাঁর দাবি, এ ঘটনাকে রং চড়িয়ে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে প্রতিপক্ষের লোকজন। তবে শনিবার সকাল থেকে মোতালেবকে আর পাওয়া যায়নি।
নিহত ফজলুল হক ফজলু (৪৫) কুষ্টিয়া সদর থানার মিলপাড়া মহল্লার তোফাজ্জল হোসেনর ছেলে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অস্র মামলা সহ মোট ৬টি মামলা রয়েছে। আহত জিন্নাহ আলী (৪৫) এনায়েতপুর থানার সৈদিয়া চাঁদপুর গ্রামের তাছের আলীর ছেলে।
নিহত ফজলুর হক ফজলু’র ভাই মজনু বলেন, আমার ছোট ভাই ফজলু দির্ঘদিন যাবৎ রাজবাড়ী থাকতেন। গত পাঁচমাস আগে একটি মামলায় সিরাজগঞ্জ থেকে গ্রেফতার হলে পুলিশ তাকে গ্রামে নিয়ে এসেছিলো। আমরা গত বুধবার জানতে পারি যে ফজলু বোমা হামলায় আহত হয়েছে। পরে হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি মোতালেব নামে এক আওয়ামীলীগ নেতা আমার ভাইকে বোমা বানানোর জন্য সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে  তার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলো। সেই বোমা তৈরির সময় একটি বোমা বিস্ফোরন হলে আমার ভাই আহত হয়। মোতালেব পুরো একদিন ফজলুকে লুকিয়ে রেখেছিলো। পরে ওর চিৎকার সইতে না পেরে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করে। আজ ভোর রাতে আমার ভাই হাসপাতালে মারা গেছে।  মাগরিব পরে জানাযা হবে।
ফজলুর ছোট ভাই বিপুল বলেন, আমার ভাইকে মোতালেব নামে সিরাজগঞ্জের এক আওয়ামীলীগ নেতা নির্বাচনের জন্য  নিয়ে গিয়েছিলো। আজ তার জন্যই আমার ভাই মারা গেছে। আমি মোতালেবের বিচার চাই।
সিরাজগঞ্জের এএসপি (বেলকুচি সার্কেল) জন রানা বলেন, ওই বাড়িতে গেলে মোতালেবের স্ত্রী-স্বজনরা তাদের জানান, রান্নার সময় প্রেশার কুকার বিস্ফোরিত হয়েছে। তবে কোনো আলামত দেখাতে পারেননি। বোমা জাতীয় বস্তু বিস্ফোরণের আলামত মেলেনি। যে কালো মাইক্রোবাসের কথা বলা হচ্ছে, সেটি এক প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার গাড়ি। সেটিতে তল্লাশি করেও আলামত পাননি। তবে বেলকুচি থানা পুলিশ শব্দের বিষয়টি নিয়ে একটি সাধারন ডায়রী করেছে।  আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করবো।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।

----- সংশ্লিষ্ট সংবাদ -----

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়