সংবাদের আলো ডেস্ক:অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিন পার হয়েছে। এরই মধ্যে নানা সংস্কারে হাত দিয়েছে সরকার। এসব সংস্কারে ১১টি কমিশন কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে গঠিত কমিশনও। নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির কাজও শেষের দিকে। আজকালের মধ্যে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনারদের নাম প্রস্তাব করবেন। নির্বাচনকেন্দ্রিক এরকম তৎপরতার মধ্যেও নাখোশ রাজনৈতিক দলগুলো। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের সম্ভাব্য কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। এমনকি সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণেও নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কোনো কিছু বলা হয়নি।নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়েছে—সরকারের পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হলেও সেই নির্বাচন কবে হতে পারে, সে সম্পর্কে কোনো আভাস দেওয়া হচ্ছে না; বরং সংস্কার শেষে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। নির্বাচনী রোডম্যাপ না থাকায় রাজনৈতিক দলগুলো খুব একটা আশাবাদী হতে পারছে না। তারা সংস্কারের পাশাপাশি অবিলম্বে সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনী রোডম্যাপ দাবি করছে। তাদের মতে, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, একে কোনো সময়সীমার মধ্যে বাঁধা যায় না। আর বড় ধরনের যদি কোনো সংস্কার করতেই হয়, তাহলে তার দায়িত্ব নির্বাচিত রাজনৈতিক নেতৃত্বের। সেজন্য জনগণের ম্যান্ডেট লাগবে।সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ভাষণের পর বিএনপি বলেছে, তারা একরকম আশাহত। পুলিশ, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দাবি করেছে দলটি। জামায়াতে ইসলামী বলেছে, সবকিছু সংস্কার করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। সেজন্য জরুরি সংস্কারের দিকে সরকারকে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দলটির নেতারা। গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য নির্বাচনের বিকল্প নেই—এমন মন্তব্য করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে নাগরিক ঐক্য। এর বিপরীতে সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার এবং আইসিটি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, শুধু নির্বাচন দেওয়াই এ সরকারের কাজ নয়। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার শেষে নির্বাচন দেওয়া হবে। অন্যদিকে আরেক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেবে সরকার।ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করা হলেও এ সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে, সে সস্পর্কে কোনো কিছু স্পষ্ট বলা হয়নি। এ সময় রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে প্রথমে ছয়টি কমিশন গঠন করে দেয় সরকার। এসব কমিশন এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। কোনো কোনো কমিশন এ মাসের মধ্যে এবং কোনো কোনো কমিশন আগামী মাসের মধ্যেই তাদের সুপারিশ প্রতিবেদন জমা দেবে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশা ছিল, এসব সংস্কার শেষেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে; কিন্তু এরপর দ্বিতীয় ধাপে আরও পাঁচটি কমিশন গঠন করা হলেও সোমবারই এসব কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সরকারের ১০০ দিন পর এসব কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। সর্বোপরি প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর দলগুলো অনেকটাই হতাশার সুরে কথা বলছে। তাদের সবার বক্তব্যেই ঘুরেফিরে নির্বাচনী রোডম্যাপের বিষয়টি উঠে আসছে।গত ২৫ আগস্ট প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ ও নির্বাচন সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, বিষয়টি নির্ধারণ করবে জনগণ। অর্থাৎ জনগণ যতদিন চাইবে, ততদিন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় থাকবে। নির্বাচন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। আমাদের কথা হলো, রাজনৈতিক দলগুলোকে আগামী নির্বাচনের প্রশ্নে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। এই ঐকমত্যে পৌঁছানোর বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে হবে আলোচনার মাধ্যমে।এমন প্রেক্ষাপটে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, যা কিছুই ঘটুক না কেন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন করে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে যেন নির্বাচন হতে পারে সেজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। তবে এ সাক্ষাৎকারের পর ৩০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে জাপানি এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সরকারপ্রধান ড. ইউনূস বলেন, নির্বাচন কবে হবে, সেটা সরকারের বিষয়। রাষ্ট্র মেরামতে সংস্কারগুলো সম্পন্ন করেই নির্বাচন দেওয়া হবে। সে সময় প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের পর রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নির্বাচনের সম্ভাব্য একটি রোডম্যাপ প্রত্যাশার কথা জানায়। এরপর একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। তবে এর পরদিনই তিনি আবার বলেন, নির্বাচন কবে হবে, সেটা প্রধান উপদেষ্টাই ঘোষণা করবেন।
বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের কাছে নির্বাচনী দিনক্ষণ নয়, একটি রোডম্যাপের জন্য বারবার দাবি জানিয়ে আসছে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া সর্বশেষ ভাষণে বলেছেন, নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়েছে। শিগগিরই নির্বাচন কমিশন গঠন হতে যাচ্ছে। পাশাপাশি শর্ত হিসেবে তিনি এ-ও বলেছেন, চলমান সংস্কারগুলো শেষ হলেই নির্বাচন দেওয়া হবে।সরকারের এমন মনোভাবের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচনী রোডম্যাপ না থাকায় তারা আশাহত। তিনি পুলিশ, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানান। নির্বাচনী রোডম্যাপ সম্পর্কে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের কালবেলাকে বলেন, সবকিছু সংস্কার করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। সেজন্য জরুরি সংস্কার করে নির্বাচনের দিকে মনযোগী হতে হবে। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না কালবেলাকে বলেন, নির্বাচন যত আগে দেওয়া হবে জাতির জন্য ততই মঙ্গল। সেজন্য সরকারকে সেদিকেই নজর দেওয়া উচিত।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2024 সংবাদের আলো. All rights reserved.