জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপার্টার: টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ভাঙিয়ে একটি সিন্ডিকেট নীরব চাঁদাবাজিতে সক্রিয় হয়ে ওঠছে। আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হওয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতারা ওই সিন্ডিকেটের মূল টার্গেট।
খোজ নিয়ে জানাগেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর নাগরপুরে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমএ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হবির নাম ভাঙিয়ে কতিপয় নেতাকর্মী নীরব চাঁদাবাজিতে মেতে ওঠেছে। তারা আত্মগোপণে থাকা ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতাদের কাছ থেকে নানা কৌশলে চাঁদা আদায় করছে। ভয় দেখিয়ে টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানাজানি হলে চাঁদার টাকা ফেরত দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
স্থানীয় বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা জানায়, নাগরপুর উপজেলা যুব দলের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম, যুগ্ন-আহব্বায়ক মিজানুর রহমান লাভলু, উপজেলা স্বেছাসেবক দলের জেহাদ হোসেন ডিপটি, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন সহ আরও কয়েকজন নেতার নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ বিএনপির সুনাম ক্ষুন হচ্ছে। মূলত উল্লেখিত ব্যক্তিদের নেতৃত্বেই ওই সিন্ডিকেটে নানা রকম অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকান্ডের জেরে উপজেলা বিএনপি বিতর্কিত হচ্ছে।
সরজমিনে জানা যায়, ভাদ্রা ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী আত্মগোপণে গেলে উত্তেজিত জনতা ইউনিয়ন পরিষদে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করে দরকষাকষির মাধ্যমে ওই সিন্ডিকেট গোপণে পাঁচ লাখ টাকা হাতিয় নেয়। পরে গত ১২ আগস্ট ভাদ্রা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আরশেদ আলী মাস্টার ও সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ চঞ্চল রীতিমতো সভা করে বক্তব্য রখে পরিষদের তালা খুলে ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলীকে চেয়ারে বসিয়ে দেন। একই ইউনিয়নের কাদালিয়া গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও আওয়ামীলীগের কর্মী মো. ফালু মিয়ার কাছে ওই সিন্ডিকেট ৭ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদার টাকা না দিলে বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে তাকে গণপিটুনী দেওয়ার ভয় দেখায়। পরে দরকষাকষির মাধ্যমে দুই লাখ টাকায় রফা করা হয়। দুই লাখ টাকার মধ্য ২৭ হাজারা টাকা নগদ পরিশাধ করে মো. ফালু মিয়া এক লাখ ৭৩ হাজার টাকার ব্যাংক চেক দেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমএ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হবি বিষয়টি তদন্ত করার জন্য ভাদ্রা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ চঞ্চলক দায়িত্ব দেন।
ভাদ্রা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ চঞ্চল জানান, কয়েক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মো. ফালু মিয়ার কাছ থেকে ২৭ হাজার টাকা নগদ এবং এক লাখ ৭৩ হাজার টাকার ব্যাংক চেক নেওয়ার অভিযোগ জানতে পেরে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য উপজেলা বিএনপি থেকে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি খোজ নিয়ে জানতে পারেন ২৭ হাজার টাকার মধ্যে ৭ হাজার টাকা মো. ফালু মিয়ার বাড়ির লোক মো. মনিরকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি মো. ফালু মিয়ার উপস্থিতিতে সমাধান করা হয়েছে।
ভারড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবু বকর ছিদ্দিক আওয়ামীলীগের বিদ্রাহী প্রার্থী হয়ে স্বত্রন্ত নির্বাচন করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ফলে তিনি আত্মগোপণ না কর নিয়মিত পরিষদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ভাঙিয়ে ওই সিন্ডিকেট মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় গত ২৯ আগস্ট ইউনিয়ন পরিষদে তালা ঝুলিয় দেওয়া হয়। পর দরকষাকষির মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকায় রফা হলে ১ সেপ্টেম্বর তালা খুল ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবু বকর ছিদ্দিককে তার চেয়ারে বসিয়ে দেওয়া হয়।
একইভাবে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে দপ্তিয়র ইউপি চেয়ারম্যান এম. ফিরোজ সিদ্দিকী, ধুবড়িয়ায় মো. শফিকুর রহমান খান, গয়হাটায় শেখ শামছুল হক, মামুদনগর মো. জজ কামাল, মাকনা ইউনিয়ন মো. শরিফুল ইসলাম, বেকড়া আটগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদে মো. শওকত হোসেন, নাগরপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কুদরত আলীকেও পরিষদে বসিয়ে দেওয়া হয়। সহবতপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. তোফায়েল মোল্লা, পাকুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. ছিদ্দিকুর রহমানও ওই সিন্ডিকেটের নীরব চাঁদাবাজির শিকার। তবে নাম উল্লেখ করে মামলা হওয়ায় সেলিমাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহীদুল ইসলাম অপু এখনও আত্মগোপণে রয়েছেন। এ ইউনিয়নে ১ নম্বর প্যানেল চেয়ারম্যান ইসরাত জাহান খানকে দায়িত্ব না দিয়ে ওই সিন্ডিকেটের নির্দেশ ইউপি সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা মো. মনির হোসেন ভূঁইয়াকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নাগরপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হবি জানান, আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং ৫ আগস্ট তাদের পতন মেনে নিতে পারছেনা। তারাই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নানা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান চাঁদাবাজি করছে এবং এর দায় বিএনপির ওপর দেওয়ার চেষ্টা করছে। এসব অপকর্ম করে তারা দেশকে অস্থিতিশীল ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে প্রশবিদ্ধ করতে চায়। বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের কোনা নেতাকর্মী কোনা প্রকার চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নয়।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2024 সংবাদের আলো. All rights reserved.