পঞ্চগড় প্রতিনিধি: শীতের জেলা নামে খ্যাত উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। এ জেলার সবচেয়ে বেশী শীত অনুভূত হয় তেঁতুলিয়া উপজেলায়। সন্ধ্যা হলে চারপাশ ঢেকে যাচ্ছে কুয়াশার চাঁদরে,পড়ছে শিশির বিন্দু। অনুভূত হচ্ছে হাড় কাঁপানো শীত । রাস্তা-ঘাট ফাঁকা হচ্ছে রাত হলেই৷ হাট-বাজার কিংবা পথে ঘাটে দেখা মিলে বস্ত্রহীন অচেনা অজ্ঞাত কিছু মানসিক ভারসাম্যহীন পাগলের৷ কনকনে শীতে পাতলা কাপড় কেউ বা কাপড় ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে৷ কাঁপছে তারা কনকনে শীতে৷ আর এভাবে চলছে তাঁদের জীবন।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতানা রাজিয়া উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও হাট-বাজারে বেড়িয়ে পড়েন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে সন্ধ্যানে। যেখানেই ভবঘুরে এসব মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে দেখছেন সেখানেই গাড়ি থেকে কম্বল বের করে বিভিন্ন ভাবে বুঝিয়ে তাদের গায়ে শীতবস্ত্র পড়িয়ে দিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়,এসব ভবঘুরে পাগলরা কেউ কেউ সুলতানা রাজিয়াকে দেখে প্রথমে ভয় কিংবা আতংকিত হলেও পরে তিনি কাছে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে গায়ে কম্বল পড়িয়ে দিচ্ছেন৷ এভাবে দেখা যায় উপজেলায় কয়েকটি বাজার ও সড়কে ঘুরে বেড়িয়ে এসব মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের শীতবস্ত্র উপহার দিয়ে বেড়ান৷
জানা যায়, সুলাতানা রাজিয়া বর্তমান তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের টানা তিন বারের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি জেলা নারী উন্নয়ন ফোরামেরও দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয়রা জানান,সুলতানা রাজিয়া এলাকায় পুষ্টি আপা নামেও বেশ পরিচিত। তিনি টানা ১৫ বছর ধরে এ উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের যে কোন এলাকায় যে কোন সময় ঘটনা কিংবা মানুষের প্রয়োজনে ডাকলে বা মুঠোফোনে কোন খবর পেলে সাথে সাথে তিনি ছুটে চলে যান৷ বিশেষ করে তেঁতুলিয়ায় গরীব,অসহায়,নির্যাতিত, নিপিড়ীত নারীদের কাছের ও আপন মানুষ হিসাবে তিনি অনেক প্রিয়৷ উপজেলার নারীদের যে কোন কিছু হলেই বা খবর পেলেই ছুটে যান তিনি। সুলতানা রাজিয়া কখনও মোটর সাইকেল চালিয়ে আবার কখনও প্রাইভেট কার চালিয়ে ছুটে যান প্রত্যন্ত এলাকায়। দীর্ঘ দিন ধরে এভাবেই সেবা দিয়ে তিনি তার দায়িত্ব পালন করেন বলে স্থানীয়রা জানান।
এবিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস সুলতানা রাজিয়া বলেন,তেঁতুলিয়া উপজেলায় কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। শীতের কারনে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। মোটা কাপড় পড়েও যখন শীত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না সেখানে পথে ঘাটে পড়ে থাকা এসব মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষরদের আরও বেশী কষ্ট হয়। আমি আমার তেঁতুলিয়ার মানুষদের ডাকে বিভিন্ন এলাকায় যাই। অনেক সময় বাড়ি রাত হয়ে যায়।
যাওয়া কিংবা ফেরার পথে দেখি এসব মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষরা শীতে অনেক কষ্ট করে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়৷ তাদের এমন কষ্ট দেখে আমি চুপ করে থাকতে পারিনি৷ তাই আমি বাহার থেকে শীতবস্ত্র কিনে তাদের খুঁজে খুঁজে পড়িয়ে দিচ্ছি৷ আসলে তারাও মানুষ আমরাও মানুষ। তারা পগল হলেও তারাও আমাদের মতো মানুষ৷ তাই সবাই যদি তাদের পাশে দাড়াই তারা অনেক ভাল থাকবে।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2024 সংবাদের আলো. All rights reserved.