তাড়াশের কুন্দাশন উচ্চবিদ্যালয় দু’বছরের ভবন নির্মাণকাজ শেষ হয়নি পাঁচ বছরেও
তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের তাড়াশউপজেলার কুন্দাশন উচ্চবিদ্যালয়ে চার তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণকাজ শুরুর দুবছরের মধ্যে ২০২১ সালে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু গত পাঁচ বছরেও তা শেষ করেনি ঠিকাদার। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে এই অবস্থা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দরপত্র অনুযায়ী কাজটি পায় পাবনার আতাইকুলা থানার মো. সোহেল রানার মালিকানাধীন ‘সাদ এন্টারপ্রাইজ’ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু প্রায় ১১ মাস ধরে প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ কাজের খবরও রাখেনি, তারা নির্মাণ কাজের স্থলে আসেনও না। এমনই অভিযোগ কুন্দাশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রশীদ সরকারের। তিনি বলেন, ‘বন্ধ কাজ শুরুর ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি অনেক বার দিয়েছেন ঠিকাদার। কিন্তু বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ দুই বছরের স্থলে পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। উপজেলার তালম ইউনিয়নে ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কুন্দাশন উচ্চবিদ্যালয়। ‘নির্বাচিত বে-সরকারি বিদ্যালয় সমূহের উন্নয়ন শীর্ষক কর্মসূচির’ আওতায় ২০১৯ সালে বিদ্যালয়টিতে চার তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ শুরু হয়। দরপত্রে দুই বছরের নির্দিষ্ট সময়ে নির্মাণ শেষের কথা থাকলেও অতিরিক্ত তিন বছর পেরিয়ে এখনও প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ কাজ পড়ে আছে। বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান জানান, কুন্দাশন উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় ২৫০ শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত।বিদ্যালয়ের পুরাতন জরাজীর্ণ আধা-পাঁকা ভবনে সংখ্যানুপাতিক হারে শ্রেণি কক্ষের চরম সংকট আছে। আছে শিক্ষক-কর্মচারীর পর্যাপ্ত অফিস, শিক্ষার্থীদের ওয়াস রুমের অভাব, ছাত্রীদের জন্য কমন রুমও নেই। সুপেয় পানির অভাবও প্রকট। শিক্ষক কামরুজ্জামান জানান, বিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা থেকে চারতলা একাডেমিক ভবন নির্মান কাজ গত ২০১৯ সালে শুরু করেন। কিন্তু তা আজও শেষ না হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারি ও শত শত শিক্ষার্থী ঝুঁকির মধ্যে জরাজীর্ণ পুরাতন ভবনে পাঠদান কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। পোহাচ্ছেন চরম ভোগান্তিও। এতে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ২০১৯ সালে কুন্দাশন উচ্চবিদ্যালয়ে চারতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করেন। এতে ভবনটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ৭৩ লাখ ৯০ হাজার ৬৫০ টাকা ৮২ পয়সা। কাজটি পায় পাবনা জেলার আতাইকুলা থানার ‘সাদ এন্টারপ্রাইজ’ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তারা ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই কার্যাদেশ পান। যা কাজ শুরুর ২ বছরের মধ্যে শেষ করার শর্তও ছিল। এদিকে কার্যাদেশ পাওয়ার পর কাজও শুরু করে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে থেমে থেমে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত কুন্দাশন উচ্চবিদ্যালয়ে চারতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণকাজটির প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ হয়।তবে আর ৩০ ভাগ কাজ নির্দিষ্ট সময়ের পর প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে শেষ হয়নি। কুন্দাশন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রশীদ সরকার বলেন, ‘ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণের দুই বছরে কাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। আবার ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে ‘সাদ এন্টারপ্রাইজ’ নামের ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণস্থলে একজন নিরাপত্তা রক্ষীও রাখেননি, খোঁজ নেননি সিরাজগঞ্জ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে কর্মকর্তারাও। তাই প্রায় ৩০ ভাগ কাজ আজও শেষ হয়নি।’ অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. সোহেল রানা বলেন, ‘গাফিলতি নয়, সেই সময় নির্মাণ সামগ্রীর দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় কাজ বন্ধ ছিল। কয়েকদিনের মধ্যেই বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নির্মাণের সব শ্রমিক বাকি কাজ শুরু করবেন।’ জানতে চাইলে তাড়াশ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর উপ-সহকারী প্রৌকশলী মো. আমিরুল ইসলাম জানান, ‘ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে একাধিক বার লিখিতভাবে কাজ শেষ করার জন্য তাগাদাপত্র দেওয়া হয়েছে। অবশ্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক জানিয়েছেন, দু-এক দিনের মধ্যেই অবশিষ্ট কাজ শুরু করে অল্প সময়ে শেষ করা হবে।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।