তারেক আতঙ্কে আন্দোলনে দ্বিধা বিএনপির
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কদিন আগে জানিয়েছেন যে, তারেককে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোই এখন তার প্রধান কাজ। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর বিএনপির মধ্যে চিন্তার ভাঁজ। বিএনপি নেতারা উদ্বিগ্ন, আতঙ্কিত। শুধু ঢাকায় বিএনপির নেতারাই নয়, লন্ডনে তারেক জিয়াও এই বার্তাকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, তারেক জিয়া লন্ডন থেকে বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। নানা বাস্তবতা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে বিএনপি। আর এই কারণেই তারা মনে করছে যে, এ রকম পরিস্থিতি হলে বিএনপির জন্য তা হবে এক কঠিন বার্তা। এমনিতেই বেগম খালেদা জিয়া মুচলেকা দিয়ে ফিরোজায় অবস্থান করছেন।
এখন তারেক জিয়াকেও যদি দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তির আওতায় আনা হয়, তাহলে বিএনপির জন্য এক কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হবে। আর এই কারণেই জোরেশোরে আন্দোলনের ব্যাপারে বিএনপির মধ্যে দ্বিধা দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রগুলো বলছে যে, বিএনপির নেতারা জানার চেষ্টা করছেন কেন প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ করে তারেক জিয়ার বিষয়টি বললেন এবং এই বিষয়কে বিএনপি নেতারা কেন গুরুত্ব দেবেন। বিএনপির নেতারাই একাধিক কারণে এটিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। প্রথমত, বিএনপির নেতারা বলছেন যে, প্রধানমন্ত্রী যখন যেটা বলেন, সেটা তিনি বাস্তবে করে দেখেন এবং এখানে তিনি সাহসিকতার সাথে কাজ করেন। যেমন, কেউ বিশ্বাস করেনি যে বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হবে।
কিন্তু বাস্তবে সেটাই ঘটেছে। সকলের কাছে অকল্পনীয় ছিল যে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে দুই বছরের বেশি সময় আটকে রাখা সম্ভব হবে না। কিন্তু সেটাই করে দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাজেই তারেক জিয়াকে লন্ডন থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে, প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা কেবল কথার কথা নয়। তিনি জেনে বুঝেই কথাটি বলেছেন বলে মনে করছেন বিএনপির অনেক নেতারা। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাজ্যের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটি অন্যতম বিষয়। যুক্তরাজ্যে আগামী ৪ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবং এই নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির পরাজয় সময়ের ব্যাপার বলে মনে করা হচ্ছে’। যদি শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি পরাজিত হয় এবং লেবার পার্টি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার পথ সহজ হবে।
কারণ ইতোমধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যে আবেদন করা হয়েছে যে তারেক জিয়াকে যেন দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তৃতীয়ত, লেবার পার্টি ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে এবং তিনি ব্রিটিশ সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হবেন। ফলে তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনাটা অনেক সহজ সাধ্য ব্যাপার হবে। চতুর্থত, ব্রিটেনে যে অভিবাসন সংকোচন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, এই নীতির কারণে এখন হয়তো তারেক জিয়ার বেশি দিন লন্ডনে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।
তাছাড়া বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্য যে চুক্তি গুলো স্বাক্ষর করেছে তাতে যে কোন দন্ডিত ব্যক্তিকে বাংলাদেশ যেমন যুক্তরাজ্যকে ফেরত দিবে, তেমনি যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে ফেরত দিবে। এ সমস্ত বাস্তবতায় অনেকে মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী একটি পরিকল্পিত চিন্তার অংশ থেকেই এই ঘোষণাটি দিয়েছেন। আর তাই বিএনপির মধ্যে একটি আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বিএনপির নেতারা মনে করছেন যে, এখন বড় ধরনের আন্দোলনের চেষ্টা করলে তারেক জিয়ার ওপর চাপ বাড়বে, তারেক জিয়ার যুক্তরাজ্যে থাকা দুর্বিষহ হয়ে পড়বে। এ কারণে তারা আন্দোলন করবে না সরকারের সাথে গোপন সমঝোতা করবে এটি নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে রয়েছে।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।