জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে জলাতঙ্ক রোগের বিনামূল্যর র্যাবিস্ ভ্যাকসিন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে আগত রোগী ও স্বজনরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। কেউ কেউ এক বা দুটি বিনামূল্যর ভ্যাকসিনের ডোজ হাসপাতাল থেকে পেলেও গত কয়েক দিন ধর সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বাধ্য হয়ে রোগীর স্বজনরা অধিকমূল্য ওষুধ বিক্রেতাদের কাছ থেকে ওই ভ্যাকসিন কিনছেন। হাসপাতালে র্যাবিস্ ভ্যাকসিনের সরবরাহ না থাকায় জলাতঙ্ক রোগীর চাপ বাড়ায় দায়িত্বরতরা ওষুধ বিক্রেতাদের কাছ থেকে কমিশন বাণিজ্যে লিপ্ত হয়েছেন বলে রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করছেন। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ ক্লিনিক ভবন স্থাপনকৃত জলাতঙ্ক রোগীদের মাঝে র্যাবিস্ ভ্যাকসিন বিতরণ কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, ভবন চত্বরে দুই শতাধিক বিভিন্ন বয়সী রোগী ও স্বজনদের ভীর। বিনামূল্যর ভ্যাকসিন না পেয়ে হতাশ আগত রোগী ও স্বজনরা। তাদের কেউ কুকুর বা বিড়ালের কামড় বা আঁচরের শিকার। বিনামূল্যর সরকারি ভ্যাকসিন না থাকার সুযোগে কয়েকটি ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধি ওই ভবন চত্বরেই র্যাবিস্ ভ্যাকসিন বিক্রি করছেন। তারা চারজনের এক একটি গ্রুপ করে একটি র্যাবিস্ ভ্যাকসিন ও চারটি সিরিঞ্জ প্রকাশ্য সাড়ে পাঁচশ’ টাকায় বিক্রি করছেন। যদিও ওইসব র্যাবিস্ ভ্যাকসিনের গায়ে সর্বাচ্চ পাঁচশ’ টাকা মূল্য লেখা রয়েছে। প্রতিটা পাঁচ টাকা মূল্যর একটি সিরিঞ্জের দাম নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তার জানান, গত ১১ ডিসেম্বর তার দুই বছরের শিশুকে বিড়াল আঁচর (খামচি) কাটে। ১২ ডিসেম্বর হাসপাতাল থেকে বিনামূল্য প্রথম ডোজটি দিয়েছেন। এভাবে তিনটি ডোজ দেওয়ার তারিখ লিখে দেন কর্তব্যরত নার্স। তার শিশুর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার দিন। হাসপাতালে এসে জানতে পারেন, র্যাবিস্ ভ্যাকসিন নেই। তিনি বাধ্য হয়ে জনপ্রতি ১৩৫ টাকা করে চারজন মিলে ৫৪০ টাকায় একটি ভ্যাকসিন কিনে চারজন রোগী নিয়েছেন। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যর র্যাবিস্ ভ্যাকসিন নেই এটা তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না। রুবী আক্তার নামে অপর এক রোগীর স্বজন জানান, তার রোগীর জন্য তিনি দুটি ডোজ বিনামূল্য পেয়েছেন। শেষ ডোজ দিতে হাসপাতালে এসে জানতে পারেন- র্যাবিস্ ভ্যাকসিনের সরবরাহ নেই। এজন্য বাধ্য হয়ে এক ওষুধ বিক্রেতার কাছ থেকে নগদ টাকায় কিনে তার রোগীকে শেষ ভ্যাকসিনটি দিতে হয়েছে। তিনি মনে করেন, ওষুধ কাম্পানীর প্রতিনিধিদের কাছ থেকে হাসপাতালের দায়িত্বরতরা কমিশন সুবিধা নিতে ভ্যাকসিন না থাকার অজুহাত দিচ্ছেন। হাসপাতালের দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স আমিনুল ইসলাম জানান, বরাদ্দকৃত সরকারি র্যাবিস্ ভ্যাকসিন শেষ হওয়ায় রোগীদের বাইরে থেকে ভ্যাকসিন কিনতে হচ্ছে। ভবনের বাইরে যিনি ভ্যাকসিন বিক্রি করেছেন তিনি হাসপাতালের কেউ নন। তাকে ওই ভবন চত্বরে ভ্যাকসিন বিক্রির অনুমতিও তাকে কেউ দেয়নি। তারা কোনো প্রকার বাড়তি সুবিধা নিচ্ছেন না। দালাল ও বহিরাগত ওষুধ বিক্রেতাদের বিষয়ে তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। এছাড়া এর আগেও কয়েক দফায় পুলিশের হাতে দালালরা আটকও হয়েছেন। দায়িত্বরত অপর সিনিয়র স্টাফ নার্স রিজিয়া জানান, এ বছর রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় সরবরাহকৃত ভ্যাকসিন সময়ের আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে ভ্যাকসিনের বাড়তি চাহিদা দেওয়া হয়েছে। দ্রুতই সরকারি ভ্যাকসিন পেয়ে যাবেন বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন। এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেনারল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আলমগীর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় র্যাবিস্ ভ্যাকসিন বিতরণে সমস্যা হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহ তারা যে পরিমাণ ভ্যাকসিনের চাহিদা দেন- তারা সে পরিমাণ ভ্যাকসিন পান না। ফলে মাঝে-মধ্যেই সমস্যা হয়। সরকারি র্যাবিস্ ভ্যাকসিন এলেই এ সমস্যার সমাধান হবে। তিনি আরও জানান, হাসপাতাল কম্পাউন্ডের ভেতরে দালাল বা কোম্পানীর প্রতিনিধিদের ওষুধ বিক্রির সুযোগ নেই। এরপরও যদি কেউ ওষুধ বা ভ্যাকসিন বিক্রি করে থাকেন তিনি খোজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2024 সংবাদের আলো. All rights reserved.