বুধবার, ২৩শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা বৈষম্যের শিকার

জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: স্বৈরাচার সরকারের দু:সময়ে দল ও দলীয় নেতাকর্মীদের ধরে রাখা টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বিএনপির ও এর অঙ্গ সংগঠনের ত্যাগী নেতাকর্মীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। স্বৈরশাসকের পতনের পর নিজ দলের উঠতি বয়সী অতিউৎসাহী নেতাদের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে স্থানীয় বিএনপি ত্রি-ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছ।

জানাগেছে, স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের ১৫-১৬ বছর বিএনপি নেতাকর্মীদের কোন কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হয়নি। উপর দলীয় নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে ঢুকানো হয়েছে। নিজেদের সুবিধাজনক স্থানে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে গেলেও আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মারপিট করেছে। দলের ওই দু:সময় নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানো ও মামলার খরচ চালানো সহ নানা সঙ্কটে বিএনপির হাল ধরে রাখা নেতারা পদ-পদবী হারিয়ে এক প্রকার কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন।উল্লেখিত কারণে কালিহাতী উপজেলা বিএনপি মূলত তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক অংশ রয়েছে- কেদ্রীয় বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক তারুণ্যদ্বীপ্ত নেতা বেনজির আহমদ টিটো। দ্বিতীয়াংশ রয়েছে দীর্ঘ সময় দলের জন্য নিবেদিত- জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেদ্রীয় সহ-সভাপতি ও ঢাকা মহানগর সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার আব্দুল হালিম, কেদ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শিল্পপতি লুৎফর রহমান মতিন, ডক্টরস অ্যাসাসিয়েশন অব বাংলাদেশর (ড্যাব) আজীবন সদস্য ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার উপদেষ্টা ডা. মো. শাহআলম, টাঙ্গাইল জেলা জিয়া পরিষদের সভাপতি ও কারা নির্যাতিত শিক্ষক নেতা একেএম আব্দুল আউয়াল, কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শুকুর মাহমুদ ও এলেঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. শাফী খান এবং মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতি বাদলুর রহমান খান।

তৃতীয়াংশে রয়েছে- মহান স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত শাজাহান সিরাজের কন্যা ব্যরিস্টার সোরওয়াত সিরাজ ওরফে শুক্লা সিরাজ।

খোজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামীলীগের দু:শাসনের ১৫-১৬ বছর কালিহাতী উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ৪৬৫ জন নেতাকর্মীকে আসামি করে ১৩টি মামলা দায়ের করা হয়। ওই ১৩টি মামলায় উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শুকুর মাহমুদ ও টাঙ্গাইল জেলা জিয়া পরিষদের সভাপতি সহ অনেকে জেল-হাজত খেটেছেন। হাজতে থাকা নেতাকর্মীদের জামিন ও মামলাগুলো পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছেন- এলেঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. শোফী খান, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেদ্রীয় সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার আব্দুল হালিম, শিল্পপতি লুৎফর রহমান মতিন, ড্যাবের আজীবন সদস্য ডা. মো. শাহ-আলম। তারা নেতাকর্মীদের জামিন করাতে এবং দলকে উজ্জীবিত রাখতে অর্থ ও সময় ব্যয় করে শ্রমও দিয়েছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের নানা সমস্যায় পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা মূলত একাট্টা রয়েছেন।

মহান স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত শাজাহান সিরাজের কন্যা ব্যরিস্টার সোরওয়াত সিরাজ ওরফে শুক্লা সিরাজ দলের দু:সময় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের খোজখবর রাখেননি। বরং বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের পাতানো নির্বাচনে অংশ নেন। ফলে কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সব ধরনের নেতাকর্মীরা তাকে প্রত্যাখ্যান করেন। বাধ্য হয়ে তিনি প্রয়াত বাবা শাজাহান সিরাজের অনুসারীদের একাট্টা করার প্রয়াস পান।

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানায়, কেদ্রীয় বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হওয়ার পর ২০২২ সাল থেকে বেনজির আহম্মেদ টিটো কালিহাতীতে যাতায়াত শুরু করেন। তিনি উপজেলা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বয়কট করে মো. মজনু মিয়াকে আহ্বয়ক, মো. শোফি খানকে যুগ্ম-আহ্বায়ক ও রফিকুল ইসলামকে (ভিপি রফিক) সদস্য সচিব করে ৫২ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ২০২২ সালের ১০ মার্চ রাতে জেলা বিএনপির তৎকালিন আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আহম্মেদ আযম খান ও সদস্য সচিব মাহমুদুল হক সোনু ওই কমিটির অনুমোদন দেন। এদিন জেলার আরও সাতটি উপজেলা ও পৌরসভার আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। মূলত তখন থেকে উপজেলা বিএনপির মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোদল প্রকাশ্যে আসতে থাকে। ওই সময় কালিহাতী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে নানা সমালোচনা হলেও দলের শীর্ষ নেতারা কর্ণপাত করেন নি। চলতি বছরে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর উপজেলা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোদল প্রকাশ্য রূপ পায়। বর্তমানে বিভক্ত উপজেলা বিএনপি পৃথকভাবে দলের কেদ্রীয় কর্মসূচিগুলো পালন করছে।

কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম (ভিপি রফিক) জানান, কাউকেই দল থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। পুরামাত্রায় গণত্রান্তিক পদ্ধতিতে সম্মেলনের মাধ্যমে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাংগঠনিক তৎপরতা বিবেচনা করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কমিটি গঠন করছে। তবে কোন কান নেতা স্বইছায় অব্যাহতি নিয়েছেন। তারা আবার সক্রিয় হলে দল তাদের বিষয় সিদ্ধান্ত নেবে।

তিনি জানান, দলের সিনিয়র নেতারা কেন বা কি কারণে আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন- তা তিনি জানেন না। তবে তাদের কর্মসূচিতে সিনিয়র নেতারা যোগ দিলে তারা অবশ্যই স্বাগত জানাবেন।

দ্বিতীয়াংশের নেতা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেদ্রীয় সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার আব্দুল হালিম, এলেঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. শোফী খান, ড্যাবের আজীবন সদস্য ডা. মো. শাহ-আলম, পেশাজীবী নেতা একেএম আব্দুল আউয়াল জানান- কেদ্রীয় বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহম্মেদ টিটো সিনিয়র নেতাদের উপেক্ষা করে সাংগঠনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটিগুলো গোপণে গঠন করছেন। তাঁর গঠিত কমিটিগুলোতে স্থানীয় বিএনপি পরিবারকে মূল্যায়ন করা হয়নি। তরুণ নেতৃত্বের অযুহাতে স্থানীয় বিএনপির ত্যাগী নেতাদেরকে পাশ কাটানো হয়েছে। ফলে অবমূল্যায়িত হয়ে তারা একতাবদ্ধ হয়েছেন।

তারা মনে করন, স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে বেনজির আহম্মেদ টিটো স্বীয় স্বার্থ অপরিপক্ক ও অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছেন- যা আগামি দিনে বিএনপির জন্য কোন সুফল বয়ে আনবেনা। তাঁর সম-সাময়িক কর্মকান্ডেই স্থানীয় বিএনপিতে দ্বিধাবিভক্ত করছে। কেদ্রীয় বিএনপির এ বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

কেদ্রীয় বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহম্মেদ টিটো জানান, কালিহাতী উপজেলা বিএনপি বর্তমান অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে সাংগঠনিকভাবে অধিকতর শক্তিশালী। প্রথমে কর্মী সম্মেলন করার পর সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছে। ঘরে বসে কমিটি ঘোষণা করা হয় নাই। আওয়ামী দু:শাসনের সময় উপজেলার ১৩৬ ওয়ার্ডে নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে প্রকাশ্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইউনিয়ন কমিটিগুলো বড় বড় সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে।

তিনি জানান, বিএনপির কমিটি থেকে কেউ কাউকে বাদ দেয়নি। যার যার কর্মতৎপরতার উপর ভিত্তি করে নেতাকর্মীরা কমিটি গঠন করেছে। ২০১৬ সালে বিরোধী দলের নেতাদের সুরক্ষার চাপ সইতে না পেরে লুৎফর রহমান মতিন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে দল থেকে চলে গেছেন। এখন যারা তাঁর সম্পর্কে অপপ্রচার বা নেতিবাচক কথা বলছেন।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।

----- সংশ্লিষ্ট সংবাদ -----

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়