‘টাকার অভাবে বাজার করতে পারি না, চিকিৎসা করবো কিভাবে’
আনোয়ার ও ফাতেমা দম্পতির সাংসারিক জীবন প্রায় ২৮ বছরের। বিয়ের এক যুগ অতিবাহিত হলেও সন্তানের মুখ দেখেনি তারা। বরং একের পর এক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা। ২০১৫ সালে প্রথমে ব্রেস্ট টিউমার হয় ফাতেমার। টিউমারের অপারেশন করার পর প্রায় এক যুগ পরে ২০১৬ সালে একটি পুত্র সন্তান এবং ২০১৮ সালে একটি কন্যা সন্তান তাদের ঘরে আলোর মুখ দেখায়। ভালোই সময় যাচ্ছিলো আনোয়ার ও ফাতেমা দম্পতির। কিন্তু কোনভাবেই যেন বিপদ পিছু ছাড়ছে না আনোয়ার ও ফাতেমা দম্পতির। আবারও হঠাৎ ২০২১ সালে ক্যান্সার ধরা পড়ে ফাতেমার। স্ত্রীকে সুস্থভাবে দেখতে আনোয়ার হোসেন নিজের চার বিঘা জমিসহ বাড়ির ভিটের অর্ধেক বিক্রি করে স্ত্রীর চিকিৎসা চালিয়ে আসছিলেন।
আনোয়ার হোসেনের বয়স ৫৫ বছর। সম্পত্তি না থাকলেও ছোট্ট একটি চায়ের দোকানের আয়ে চলত ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ। দুমাস পূর্বে স্ত্রীর অসুস্থতা ও সাংসারিক চাপে হঠাৎ তিনিও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর প্যারালাইজড হয়ে পড়েন তিনি। চিকিৎসা, বাচ্চাদের পড়াশোনা এবং সংসার খরচ মিলিয়ে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয় তাদের। চিকিৎসায় এতো বেশী পরিমাণে টাকা সামলাতে না পেরে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও পপি এনজিও থেকে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছেন। এদিকে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ব্যাংক ও এনজিওর চাপে রয়েছেন তারা বাচ্চাদের পড়াশোনা ও স্বামীর চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের নিকট সহযোগীতা চেয়েছেন আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা।
আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা বলনে, ‘আমরা পরিবারের দুইজনই রোগী। আয়-উপার্জন করার মতো কেউ নেই। অর্থের অভাবে ঠিকমতো খাবার জোটে না। বাজার করতে পারি না। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন যায় আমাদের। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারি না, ওষুধ কিনতে পারি না। ছোট ছেলে-মেয়ে দুইটার পড়ালেখার খরচ দিতে পারছি না। আমার স্বামী আমার চিকিৎসার জন্য সব জায়গা জমি বিক্রি করে দিয়েছে। এখন আমাদের আর কোন কিছুই নেই এই থাকার জায়গা ছাড়া। আপনাদের কাছে সহোযোগিতা চাচ্ছি, আপনারা আমাদের সহোযোগিতা করেন।’ প্রতিবেশীরা বলেন, প্যারালাইজড হওয়ার পর আনোয়ার আর চলাচল করতে পারেন না, তার স্ত্রীও অসুস্থ। তাদের দুটি সন্তানই এখনো ছোট। ছেলেটার বয়স (৮) মেয়েটির বয়স (৬)। সুস্থ থাকা অবস্থায় আনোয়ার ছোট্ট একটি চায়ের দোকানের আয়ে চলত তাদের সংসার। এখন টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেন না, বাজার করতে পারেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা রাসেল ইসলাম বলেন, ‘আনোয়ার ও তার স্ত্রী দুইজনেই অসুস্থ। তাদের আয় উপার্জন করার মতো কেউ নেই। অর্থের অভাবে খুব কষ্ট করে তারা। ঠিকমতো বাজার করতে পারেন না। চিকিৎসা করাতে পারেন না। অভাব অনটনে অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হয়। তাদের সহযোগিতা করার জন্য সরকার ও বিত্তবানদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।’ আরও এক স্থানীয় বাসিন্দা মানিক হোসেন বলেন, ‘স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য টাকা জোগাড় করতে গিয়ে মানসিক চাপের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আনোয়ার হোসেন। এখন তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই অসুস্থ।’
সহযোগীতার বিষয়ে জানতে চাইলে ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল আলম জানান, ‘চিকিৎসার জন্য এককালীন আর্থিক সহযোগীতার বিধান রয়েছে। আবেদন পাওয়ামাত্র সহযোগীতা করবেন বলে তিনি আশ্বাস দেন।’ স্বামী-স্ত্রীর চিকিৎসা, সংসারের খরচ এবং ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচা চালাতে অসহায় পরিবারটির পাশে দাড়াতে সমাজের বিত্তবান ও দানশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ফাতেমার পরিবার ও এলাকাবাসী। সহযোগীতার জন্য তাদের ব্যক্তিগত বিকাশ ও নগদ নম্বর- ০১৯১৫-২৪৬৪৪৯।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।