সংবাদের আলো ডেস্ক: ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সিলেটের যুবক আল-আমিন নিহত হয়েছেন দাবি করে শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয় আশুলিয়া থানায়। আল আমিনের স্ত্রী কুলসুম আক্তার বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। পরে জানা গেছে আল-আমিন জীবিত। এ ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক চ্যাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কক্সবাজার থেকে কুলসুমসহ ৩ জনকে আটক করে নিয়ে আসে আশুলিয়া থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে কক্সবাজারের আলেকজাহান এসএম পাড়ার মোস্তাক আহমেদের বাড়ি থেকে কুলসুম, রুহুল আমিন ও শফিকুর রহমানকে আটক করে পুলিশ। স্বামী আল-আমিনকে মৃত দেখিয়ে মিথ্যা মামলার কথা স্বীকার করেছেন কুলসুম। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সকালে আশুলিয়া থানা হেফাজতে কুলসুম দাবি করেন, স্বামীকে মৃত দেখিয়ে করা মামলাটি চাকরির প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে করানো হয়েছে। কুলসুমের অভিযোগ, তাকে ব্ল্যাকমেইল করে এ মিথ্যা মামলা করিয়েছেন রুহুল আমিন ও শফিকুর রহমান নামে দুই ব্যক্তি। আটক মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানার টেপড়া গ্রামের মেছের আলীর ছেলে ও একই জেলার ঘিওর থানার ফুলহারা গ্রামের মৃত মাসুম আলীর ছেলে। এছাড়া ভুয়া মামলার বাদী কুলসুম ঘিওর থানার স্বল্পসিংজুরি বাঙলা এলাকার আব্দুল খালেকের মেয়ে। আটকের পর ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, স্বামী আল-আমিনকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি সিলেটে থাকতেন তিনি। ৪ বছরের সন্তান নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল তার। গত ২৮ আগস্ট দাম্পত্য কলহের জেরে সিলেট থেকে সাভারে বোনের কাছে চলে আসেন। পথে গাড়িতে দেখা মেলে শফিকুর রহমানের সাথে। শফিক কুলসুমকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যায় রুহুল আমিনের কাছে। রুহুল আমিন ও শফিকুর কৌশলে কুলসুমকে দিয়ে তার স্বামীকে মৃত দেখিয়ে হত্যা মামলা দায়ের করান। আল-আমিনের স্ত্রী কুলসুম বেগম বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে শ্বশুর বাড়ি সিলেট থেকে সাভারে আসি গত ২৮ আগস্ট। আমার স্বামী আমার ভরণপোষণ না দেওয়ায় সাভারে এসে চাকরির খোঁজ শুরু করি। এসময় গাড়িতে পরিচয় হয় শফিকুর রহমান নামের এক ব্যক্তির সাথে। তিনি চাকরি দেওয়ার কথা বলে আমার কাছে জন্ম নিবন্ধন চেয়ে নেয়। পরে একদিন সাভারের সেনা শপিং কমপ্লেক্সে শফিকুর রহমান ও রুহুল আমিন আমাকে ডেকে নেয়। পরে তারা জন্ম নিবন্ধন দিয়ে মামলা প্রস্তুত করেছে বলে আমাকে জানায়। আমি রাজি না হলে নানা রকম ভয়ভীতি দেখায় তারা। পরে তারা আমাকে আদালতে নিয়ে উকিলের সামনে কাগজে স্বাক্ষর নেয়। রুহুল ও শফিকুর আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে যা বলেছে তাই করতে বাধ্য করেছে। সর্বশেষ তারা আমাকে কক্সবাজারের একটি গ্রামে বাসা ভাড়া করে দিয়ে থাকতে বলে। আমি সেখানেই থাকি, গত ১৯ নভেম্বর কক্সবাজার শফিক আসে। ২১ নভেম্বর পুলিশ রুহুলসহ কক্সবাজার এসে শফিককে আটক করে। তিনি আরও বলেন, স্বামী দাবি করা জীবিত আল-আমিনই আমার স্বামী, তিনি বেঁচে আছেন। আমাকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে জন্ম নিবন্ধন নিয়ে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করে মিথ্যা মামলার বাদী বানিয়েছেন। রুহুল ও শফিক আমাকে যা বলতে বলেছেন আমি বাধ্য হয়ে তাই করেছি। বাদী কুলসুমের বোন ফাতেমা বলেন, আমার বোনকে রুহুল আমিন নানাভাবে ভয় দেখিয়েছেন। রুহুলের কাছে সবসময় পিস্তল থাকে বলে ভয়ভীতি দেখান। রুহুল বেশ কয়েকজনের নাম মামলা থেকে কেটে দিয়েছেন। সে সময় আমার ছোটবোনকে আদালতে নিয়ে যায় তারা। তারা বলতো যে অজ্ঞাত ছেলেটা মারা গেছে সে যেন বিচার পায়। সেজন্য এই মামলা দায়ের করেছেন। পরে বুঝতে পারি তারা একটি চক্র ও মামলা বাণিজ্যে জড়িত। পরবর্তীতে ঝামেলায় পড়ে আবার তারা একটি কাবিননামা তৈরি করে নিয়ে এসে আমাদের দেয়। সেই কাবিননামাটিও ভুয়া। আমার বোন আশুলিয়া কিংবা সাভারেই থাকতো না। সে থাকতো সিলেটে। শফিক ও রুহুল আমার বোনকে ফাঁসিয়েছে। অভিযুক্ত শফিকুর রহমান বলেন, কুলসুমের সাথে আমার গাড়িতে পরিচয় হয়। পরে তাকে নিয়ে আমি রুহুল আমিনের কাছে যাই। তিনি মামলার সব কাজ করেছেন। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। রুহুল আমিন বলেন, কুলসুমই এসে আমার কাছে মামলা করার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন। পরে আমি তাকে সহায়তা করেছি। টাকার বিনিময়ে কতজন আসামির নাম বাদ দেওয়ার জন্য এফিডেভিট করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মনোয়ার মাস্টার, বাশার, ইলিয়াস শাহী ও সারোয়ার তালুকদারের নাম মামলা থেকে বাতিলের জন্য এফিডেভিট করা হয়েছে। তবে তাদের কাছে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক এসআই রকিবুল ইসলাম বলেন, তদন্ত করে বাদীকে উদ্ধার করে দুইজনকে আটক করা হয়েছে। তারা জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলা দায়েন করেছিলেন। যে মামলায় আসামি করা হয়েছিল ১৩০ জনকে। অথচ বাদীর স্বামী এখনও বেঁচে আছেন এবং আদালতে উপস্থিত হয়ে আল-আমিন সব স্বীকার করেছেন। আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) আবু বকর বলেন, জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলা দায়েরের পেছনের কারিগর হলেন শফিক ও রুহুল আমিন। তাদের আটক করা হয়েছে। তবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও বিস্তারিত জানানো যাবে। প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি ছুড়লে অন্তত অর্ধশতাধিক নিহত হন। তাদের মধ্যে একজনের মরদেহ বেওয়ারিস দাফন করা হয়। সেই লাশকে আল-আমিন বানিয়ে ১৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। যার বাদী জীবিত আল-আমিনের স্ত্রী কুলসুম। তবে মামলার প্রধান কারিগর রুহুল আমিন ও শফিকুর রহমান বলে জানা গেছে। সূত্র: সময়ের কন্ঠস্বর
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2024 সংবাদের আলো. All rights reserved.