সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: ছোটবেলা থেকেই ফারজানার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। নিম্নবিত্ত একটি কৃষক পরিবারে বেড়ে ওঠায় স্বপ্নটা ছিল খুবই কঠিন। সংসারের অভাব অনটনে মেয়ের স্বপ্ন পূরণে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন পিতা-মাতা। পরিবারের সহযোগিতা আর কঠোর পরিশ্রমে ফারজানা পেয়েছেন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ। পৌঁছেছেন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে। তবে মেয়ের মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় খুশির পরিবর্তে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বাবা-মা। জানা যায়, ফারজানা আক্তার তামান্না পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের বড় গাবুয়া গ্রামের মো. আলাউদ্দিন এবং মিসেস সেলিনা বেগমের ছোট মেয়ে। বাবা একজন কৃষক এবং মা গৃহিণী। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ফারজানা আক্তার তামান্না। ৪৭২৮ মেধা তালিকা নিয়ে তিনি পটুয়াখালী সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। গত রবিবার (১৯ জানুয়ারি) প্রকাশিত এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর ফারজানার উত্তীর্ণের খবরে খুশিতে আত্মহারা পরিবার ও আত্মীয় স্বজনরা। ফারজানা আক্তার তামান্না প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষক পরিবারে বেড়ে উঠেন। হরিদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে পিএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। গলাচিপা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে জেএসসি ও ২০২১ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে ভর্তি হন বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজে। সেখানে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করেন জিপিএ ৪.৯২ পেয়ে। ২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করে অংশ নেয় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায়। কিন্তু সেবার উত্তীর্ণ হয়েও কোন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়নি তামান্না। এবার পেলেন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষাজীবনে ধারাবাহিক মেধা এবং কঠোর পরিশ্রম তাকে এই অসামান্য সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে।দরিদ্র কৃষক বাবা মো. আলাউদ্দিন কষ্ট করে টাকা ধার করে, জমিজমা বিক্রি করে মেয়ের পড়াশোনা করিয়েছেন। মেয়ের এমন সাফল্যে খুশি পরিবার। তবে ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পিতা-মাতা। ফারজানার বাবা মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমার মেয়ে আজ আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আমরা গর্বিত এবং আশা করি সে একদিন দেশের একজন সেরা চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করবে। আমার এতদিনের পরিশ্রম আজ সার্থক।’ ফারজানা তার সাফল্যের জন্য বাবা-মা,শিক্ষকদের এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘গতবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে যখন চান্স পায়নি তখন হতাশায় ভেঙে পড়ি। মানুষের বিভিন্ন কটুকথা শুনতে হয়েছে আমাকে ও আমার পরিবারের সবাইকে।আমার বাবা মা সবসময় কষ্ট করে আমার পড়াশোনা করিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমার পড়াশোনা চালিয়ে নিতে জমিজমা বিক্রি করতে হয়েছে। কোচিং করেও যখন প্রথমবার চান্স হয়নি এই ব্যর্থতা আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। পরে বরিশালের আমার কলেজের এক সিনিয়র বড় বোন তামান্না বেগম ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। তার কাছে নতুন করে স্বপ্ন দেখার অনুপ্রেরণা পাই। তার দেয়া দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ অনুযায়ী কোচিং ছাড়াই ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় আবার অংশগ্রহণ করি। পরীক্ষার পরপরই মনে হয়েছে আমি চান্স পাবো। ফলাফল দেখার পর আমি খুশিতে কান্না করে দিয়েছি।’ গলাচিপা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ফারজানা আমাদের বিদ্যালয়ের গর্ব। তার ধারাবাহিক মেধা এবং কঠোর পরিশ্রম সকল শিক্ষার্থীর জন্য অনুপ্রেরণা।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2025 সংবাদের আলো. All rights reserved.