টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে মহিলা সমিতির নামে তিন কোটি টাকা আত্মসাত ও যৌন নিগ্রহের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে বিপাকে পড়েছে এক গৃহবধূ। ক্রমাগত হুমকিতে প্রাণনাশের আশঙ্কায় ওই গৃহবধূ ও তার পরিবার এক প্রকার আত্মগোপণে রয়েছে। সোমবার (৪ মার্চ) টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওই গৃহবধূ ঘটনার পূর্বাপর পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
স্বামীকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে ওই গৃহবধূ জানান, কালিহাতী পৌরসভার উত্তর বেতডোবা এলাকায় বসবাসরত ৪০জন হিন্দু নারী নিয়ে ২০১৯ সালে রেজিস্ট্রিবিহীন একটি মহিলা সমিতি গঠন করেন। তিনি সঞ্চয় সংগ্রহকারী (মাঠকর্মী) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সমিতির সদস্যরা প্রতি সপ্তায় সাধ্য অনুযায়ী সঞ্চয় করেন। প্রতি বছর দুর্গাপূজার সময় সঞ্চিত টাকার লভ্যাংশ সদস্যদের মধ্যে হিসাবানুযায়ী বণ্টন করে দেওয়া হয়। লভ্যাংশ পাওয়ায় সদস্যরা অতিলোভে মোটা অংকের টাকা সঞ্চয় করতে থাকেন।
এক পর্যায়ে সমিতির ক্যাশিয়ার রিনা পাল ও তার ভাসুর পরিমল পাল সমিতির সদস্যদের গচ্ছিত প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাত করেন। সদস্যরা তাদের টাকা ফেরত চাইলে তারা তালবাহানা করতে থাকেন। সদস্যরা টাকা উত্তোলনকারী হিসেবে ওই গৃহবধূকেও চাপ দিতে থাকেন। তিনিও পরিমল পাল ও রিনা পালকে টাকার জন্য চাপ দেন। পরে টাকা দেওয়ার কথা বলে নারায়ন পালের স্ত্রী রিনা পাল ও তার ভাসুর পরিমল পাল ওই গৃহবধূকে পৌরসভার চাটিপাড়া এলাকায় ডেকে নিয়ে তার উপর যৌন নিগ্রহ চালায়।
এ বিষয়ে ওই গৃহবধূ বাদি হয়ে টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি (মামলা নং-১১৩/২৩, ধারা- না. শি. আইনের ৭/৯(১) এবং পর্ণগ্রাফী আইনের ৮(২)/৮(৩)) এবং সদস্যদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে টাঙ্গাইলের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কালিহাতী থানা আমলী আদালতে আরও একটি মামলা (নং-১৩৮/২৩, ধারা-৪০৬/৪২০/৫০৬(!!)/১০৯) দায়ের করেন। মামলায় রিনা পাল, তার স্বামী নারায়ন পাল ও তার ভাসুর পরিমল পালকে অভিযুক্ত করা হয়। পরে যৌন নিগ্রহের মামলায় তারা সবাই গ্রেপ্তার হয়ে হাজতবাস করে গত ২২ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্ত হন। জামিনে মুক্ত হয়ে তারা ওই গৃহবধূকে মেরে গুম করার ক্রমাগত হুমকি দিতে থাকে।
এ বিষয়ে ওই গৃহবধূ কালিহাতী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহন করেনি বলে ওই গৃহবধূ অভিযোগ করেন। থানায় জিডি করতে না পেরে তিনি স্বামী উদয় কর্মকারকে নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। নিরাপত্তার প্রয়োজনে তারা বিভিন্ন সময় নানা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আত্মগোপণে থাকছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
এ বিষয়ে কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুল ফারুক জানান, জিডি না নেওয়ার কোন অধিকার থানা কর্তৃপক্ষ রাখেনা। থানা অবশ্যই জিডি গ্রহণ করে থাকে। তাছাড়া বর্তমানে অনলাইনেও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা যায়। ওনি কখন থানায় এসেছিলেন তা তিনি জানেন না। আবার থানায় জিডি করতে গেলে অবশ্যই তা গ্রহণ করা হবে।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2024 সংবাদের আলো. All rights reserved.