নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভাগ্যবান একজন ব্যক্তি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। টানা তিনবারের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দল এবং মন্ত্রণালয় সামলাতে তিনি হিমশিম খান না, বরং ভালোই উপভোগ করেন। প্রতিদিনই তিনি দলীয় কার্যালয়ে অথবা আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে উপস্থিত হন এবং সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। আর এই ব্রিফের প্রধান বিষয় থাকে বিএনপিকে গালমন্দ করা, বিএনপির সমালোচনা করা।বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তিনি হরহামেশাই কথা বলেন। মন্ত্রণালয়ের বিষয় নিয়েও তিনি মাঝে মাঝে তার মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সাংবাদিকদের গালমন্দ করা এবং সাংবাদিকদের শিক্ষা দীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও ওবায়দুল কাদের মিডিয়া বান্ধব একজন ব্যক্তি হিসেবেও হিসেবে পরিচিত।তিনি সবসময় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পছন্দ করেন এবং এই কারণেই তিনি প্রতিনিয়ত ইস্যু থাকুক না থাকুক সংবাদ সম্মেলন করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চান তিনি যখন সংবাদ সম্মেলন করছেন তখন দলের সিনিয়র নেতারা তার চার পাশে থাকুক। তিনি সংবাদ সম্মেলন করতে করতে পাশের নেতাদের দিকে তাকান। তারা মাথা নেড়ে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে সম্মতি জানান।আবার অনেক সময় হেসেও সম্মতি জানাতে হয়। ওবায়দুল কাদের এই সমস্ত বিষয়গুলো লক্ষ্য করেন। সংবাদ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ নেতারা আসলে তিনি অসন্তুষ্ট হন। তাদেরকে ফোন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের জন্য আসতে বলেন। সাধারণত দেখা যায়, যে সমস্ত আওয়ামী লীগের নেতাদের তেমন কোন কাজ নেই বা যারা মন্ত্রিত্ব পাননি তারাই ওবায়দুল কাদেরের চারপাশে সবসময় থাকেন।
এখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সংবাদ সম্মেলন গুলোতে নিয়মিতভাবে দেখা যায় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, বিএম মোজাম্মেল এর মতো নেতাদেরকে। তবে এতে সন্তুষ্ট নন ওবায়দুল কাদের। তিনি চান দলের আরও গুরুত্বপূর্ণ নেতারা আসুক। বিশেষ করে দলের যারা সিনিয়র আছেন তারা যেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন, সেটা তিনি প্রত্যাশা করেন। কিন্তু ইদানীং এই নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলের গুরুত্বপূর্ণ সিনিয়র নেতারা গড় হাজির থাকছেন। তারা নানা কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছেন।' ওবায়দুল কাদেরের সাম্প্রতিক সময়ে সম্মেলনগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. রাজ্জাককে মাত্র দু একবার দেখা গেছে। অধিকাংশ সময় তিনি উপস্থিত থাকেন না। ১১ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানককে সর্বোচ্চ তিনবার দেখা গেছে সংবাদ সম্মেলনে। অন্য সময় তিনি মন্ত্রণালয় এবং এলাকার ব্যস্ততার কারণে সেখানে আসেননি বলে জানানো হয়েছে।আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমানকে দেখা গেছে মাত্র দুবার। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ আগে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতেন। কিন্তু ইদানীং তার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি কমেছে। যদিও মাঝে মাঝে তাকে দেখা যায়। আওয়ামী লীগের আরও দুজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং ডা. দীপু মনি প্রায় অনুপস্থিত থাকেন। তারা এখান থাকেন না। ড. হাছান মাহমুদ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বে আছেন। এই যৌক্তিক কারণেই তিনি থাকতে পারেন না বলে জানা গেছে। ডা. দীপু মনি হঠাৎ হঠাৎ করে এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন, তবে তিনি নিয়মিত নন। বাহাউদ্দিন নাছিম এক সময় এই সংবাদ সম্মেলনে নিয়মিত থাকতেন কিন্তু এখন তিনিও কম উপস্থিতি থাকছেন।
এ নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে যে, ওবায়দুল কাদেরের এই সংবাদ সম্মেলন গুলো কী পানসে একগুয়েমিতে ভরা হচ্ছে? আর এ কারণেই কী দলের সিনিয়র নেতারা এই সংবাদ সম্মেলন গুলো এড়িয়ে যাচ্ছেন? এ ধরনের সংবাদ সম্মেলন প্রতিনিয়ত করার দরকার কী তা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকে মনে করেন যে, এই ধরনের সংবাদ সম্মেলন প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির করা উচিত নয়। বিভিন্ন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে দিয়ে সংবাদ সম্মেলন গুলো করানো যেতে পারে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতে হবে কেন? আর এসব কারণেই কী সিনিয়র নেতারা ওবায়দুল কাদেরকে এড়িয়ে যাচ্ছেন? আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গেলে এই গুঞ্জন শোনা যায়।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2024 সংবাদের আলো. All rights reserved.