সংবাদের আলো ডেস্ক:কাউন্সিলরদের পরিবর্তে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে একমত নয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, কাউন্সিলরদের সরিয়ে দিলে জুলাই বিপ্লবে ভূমিকা রাখা সাধারণ জনগণের প্রতি অবিচার করা হবে। দ্রুততম সময়ে এই সমস্যা সমাধান করতে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাকে অনুরোধ করা হবে। জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, যারা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন, তারা বহাল থাকুক। ফ্যাসিস্টদের যারা সহায়তা করেছিল, এমন কেউ বহাল থাকতে পারবে না। আমরা প্রশাসক দিয়ে দেশ চলতে দেখতে চাই না। বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে ‘ছাত্র-গণহত্যা ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সিটি ও পৌর কাউন্সিলরদের জনস্বার্থে পুনর্বহালের দাবি ও বর্তমান সরকারকে সহযোগিতার লক্ষ্যে’ আয়োজিত সমাবেশে তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ পৌর কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশন এ আয়োজন করে। সারজিস আলম বলেন, খুনি হাসিনা বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকার জন্য জনগণের ভোটের ওপর নির্ভর করেননি, খুনি হাসিনা টিকে ছিলেন আমলা ও প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে। এ কারণে জনগণের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। সেই জনগণ এই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়ে খুনি হাসিনাকে দেশছাড়া করেছে। ছাত্র-জনতার রক্ত দেওয়া নতুন বাংলাদেশে প্রত্যাশা হচ্ছে আমরা কোনো ব্যক্তির হয়ে কাজ করব না। সদ্য অপসারণ করা কাউন্সিলরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যদি দেশের মানুষের জন্য হন, আমরা আপনাদের জন্য জীবন কোরবানি হব। বাংলাদেশের মানুষ গত ১৬ বছরে যে অন্যায়, নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, আমরা বিশ্বাস করি, আপনাদের ভেতরে সাহস ও নৈতিকতা আছে বলেই চব্বিশের যোদ্ধাদের সামনে এসে বসেছেন। আগামী তরুণ প্রজন্ম চায় আমরা দলকানা ও ব্যক্তিকানা হব না। আমরা কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ উদ্ধার করব না। আমরা নতুন একটি স্বপ্ন দেখব, জনগণের কাছে যাব, জনগণের কথা শুনব। জনগণের কাছে জবাবদিহি করার মানসিকতা থাকবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা থাকবে।সারজিস বলেন, আমরা অবশ্যই চাই যারা নিজের যোগ্যতায় প্রায় সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়াই করে সংগ্রাম করে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন, তারা জনগণের প্রতিনিধি হিসেবেই থাকবেন। কিন্তু আপনাদের জায়গা থেকে নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, আপনাদের পক্ষ হয়ে যে আমরা লড়াই করব আপনাদেরও প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে হবে। ফ্যাসিস্টের সঙ্গে কারও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, কাউন্সিলররা শুধু ৯টা ৫টা অফিস করেন না, তারা সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদানসহ ২৪ ঘণ্টা মানুষের সঙ্গে সংযুক্ত থাকেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী কাউন্সিলররা তিন কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে। ওই তিন কোটি মানুষ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আজকে যদি আপনাদের (কাউন্সিলর) সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে জনগণের সেই অবস্থান ভুল প্রমাণিত হবে। অতিদ্রুত এ বিষয়ে একটি কমিশন গঠন করে ফ্যাসিবাদবিরোধী কাউন্সিলরদের পুনর্বহালের জন্য এলজিইডি উপদেষ্টার প্রতি অনুরোধ জানান হাসনাত। জনগণ কাউন্সিলরদের কাছে সমস্যার কথা বলতে চায় উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, তাদের কখনো আপনি অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসারের কাছে পাঠাতে পারবেন না। একজন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার তার রুটিন কাজ সম্পন্ন করে জন্ম নিবন্ধনসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। অনেক কাউন্সিলর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় অনেককে জেলে যেতে হয়েছে। আমি অনেককেই চিনি, যারা জেলে থেকে নির্বাচন করে জয়লাভ করেছেন। ওই মানুষগুলোকে আমরা সম্মান জানাতে চাই। আমি বিশ্বাস করি এখানে যারা রয়েছেন, সবাই ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তি। এটা যদি না হতো তারা কখনোই আমাদের সামনে আসত না। আমাদের এই ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নে আমরা অবশ্যই কাজ করব।
এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের বহাল রেখে সিটি ও পৌর কাউন্সিলরদের বাতিল করা গ্রহণযোগ্য নয়। অথচ আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও আমলারা এখনো বহাল তবিয়তে। যে আমলারা আওয়ামী লীগের দালালি করেছেন, তাদের সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দায়িত্ব দেওয়া গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।বাংলাদেশ সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম খান বলেন, যারা ফ্যাসিবাদের সমর্থক যারা আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী তাদের পদচ্যুত করার পক্ষে আমরা। কিন্তু আমরা যারা ফ্যাসিবাদ ও গণহত্যার বিপক্ষে রাজপথে সোচ্চার ছিলাম, তাদের অনতিবিলম্বে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় পুনর্বহাল করা হোক। সারা দেশে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে ফ্যাসিবাদের সমর্থক আমলাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নিরাপদ নয়। জনভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে, সাধারণ মানুষ সেবা না পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। বিষয়টি অনুধাবন করে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করব, এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে। বাংলাদেশ পৌর কাউন্সিল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম মধু বলেন, আমরা চাইলে ঢাকায় ৫০ লাখ মানুষ সমবেত করতে পারি। কিন্তু আমরা এসব করতে চাই না। আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার চাই। আমাকে রাজপথ থেকে গ্রেপ্তার করে ভাতের হোটেলের হারুন গুম করে রেখেছিল। আমার এক হাত ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু আমরা দমে যাইনি।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2024 সংবাদের আলো. All rights reserved.