কক্সবাজার সৈকতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ রোবট ‘দানব
সংবাদের আলো ডেস্ক: আমিই দানব, তোমরাই আমাকে সৃষ্টি করেছ। যত্রতত্র প্লাস্টিক দিয়ে ধীরে ধীরে পুরো বিশ্বকে গ্রাস করব। এই স্লোগানকে সামনে রেখে সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতার বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে নির্মিত হয়েছে আকাশছোঁয়া একটি ‘রোবট দানব’। আছে দুটি ছোট প্লাস্টিক দানব ছানা। পরিত্যক্ত সামুদ্রিক প্লাস্টিক দিয়ে একদল স্বেচ্ছাসেবী এই রোবট দানব তৈরি করে। এই দানব প্লাস্টিক দূষণে প্রাণ-প্রকৃতির বিরূপতার সাক্ষ্য দিচ্ছে। জেলা প্রশাসন কক্সবাজার ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নির্মিত সৈকতের সুগন্ধা সীগাল পয়েন্টে প্রদর্শন করা হচ্ছে ওসান প্লাস্টিক বর্জ্যে তৈরি এ দানব ভাস্কর্যের।বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় এই রোবট ভাস্কর্যের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়ামিন হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসপি আবুল কালাম।
জেলা প্রশাসক বলেন, প্লাস্টিক যে দানবের মতো সমুদ্র ও জনজীবন ধ্বংস করছে এবং ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকা এই ভয়াবহতা দ্রুতই রুখে দিতে হবে। এই সতর্কতা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই ভাস্কর্য প্রদর্শনীর এই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে। আশা করছি এর মাধ্যমে মানুষ প্লাস্টিক ব্যবহারে আরও সতর্ক হবে।বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় যে কোনো মহৎ উদ্যোগে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে এবং থাকবে। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনকে সঙ্গে নিয়ে জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগে স্থানীয় জনগণ এবং পর্যটকরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে এবং সমুদ্রসৈকতে প্লাস্টিক না ফেলে এক্সচেঞ্জ স্টোরে জমা করেছে। যা প্লাস্টিক দূষণ রোধে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয় প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। সরকারের পলিসির সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা সারা দেশ থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে ৫০০ টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রিসাইকেল করার উদ্যোগ নিয়েছি। এতে করে প্লাস্টিক বর্জ্য ম্যানেজমেন্টে সরকারি খরচ যেমন কমবে তেমনি মানুষও জানতে পারবে কীভাবে রিসাইকেলের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করা যায়। দেশব্যাপী এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে কক্সবাজারে আমরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ৪ মাস ব্যাপী প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে কাজ করে যাব। প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেলের পাশাপাশি এখানে সচেতনতামূলক ভাস্কর্য প্রদর্শনীর আয়োজনও করছি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ভাস্কর ও শিল্পী আবীর কর্মকার বলেন, বিদ্যানন্দের ভিন্নধর্মী উদ্যোগ প্লাস্টিক দানবটি তৈরি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের একদল শিল্পী। এতে তারা প্লাস্টিক বর্জ্যের পাশাপাশি ব্যবহার করেছেন কাঠ, পেরেক ও আটা (গাম)সহ আরও কয়েকটি উপকরণ। ভাস্কর্য শিল্পীদের দাবি, এটি ওসান প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি বিশ্বের সর্ব বৃহৎ ‘রোবট দানব’। এটির উচ্চতা ৬২ ফুট। এটি বানাতে প্রায় ১০ টন প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়েছে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ মুবারক বলেন, গত প্রায় ১ মাস ধরে কক্সবাজার, ইনানী ও টেকনাফের সমুদ্রসৈকত থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে অন্তত ১০ টন সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্য। এসব বর্জ্য দিয়ে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে নির্মাণ করা হয়েছে এ প্লাস্টিক দানব। বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটক ও স্থানীয়দের মাঝে প্লাস্টিক বর্জ্যের দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগ। আর এটি পুরো পর্যটন মৌসুম সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এটাকে কেন্দ্র করে এখানে প্লাস্টিক দূষণবিরোধী সচেতনতামূলক পথনাটক ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।গত ৭ নভেম্বর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের জন্য প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর ও স্থানীয়দের জন্য প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ মার্কেট উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া খালি পাত্র, বোতল ও পলিথিনের প্যাকেটের বিনিময়ে যে কেউ নিতে পারবেন চাল, ডাল, তেল, চিনি ও লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি এবং পর্যটকরা জিতে নিবেন বই-কলম, ক্যাপ, ব্যাগসহ বিভিন্ন উপহার। এই কার্যক্রম থেকেই মূলত ১০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ হয়।
এদিকে গত মঙ্গলবার বিকালে প্লাস্টিক বর্জ্যে নির্মিত এ দানবটি দেখতে ভিড় করছেন সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা। তারা বলছেন, এটি দেখতে এসে মানুষ দৈত্য-দানবের ভয়ংকর রূপের মতো প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন হবেন। পাশাপাশি নিজেরাও প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে সজাগ থাকবেন।পরিবেশবাদীসহ সচেতনমহল বলছে, বিদ্যানন্দের ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এতে মানুষ প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত হবেন। বিদ্যানন্দের মতো অন্যান্য সংগঠন ও সংস্থাগুলোকে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে এগিয়ে আসার আহ্বান তাদের।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে সর্বপ্রথম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে প্লাস্টিক দানব নির্মাণ করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। এবার সেই দানব আরও ভয়ংকর রূপে ফিরে এসেছে। সঙ্গে নিয়ে এসেছে আরও দুটি দানব। তার মানে সমস্যা কমেনি বরং আরও বেড়েছে। সমুদ্র থেকে উঠে আসা এই দানব মানবজাতিকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে। পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করছে। মানুষ যদি সচেতন হয়ে প্লাস্টিক ব্যবহার কমিয়ে দেয় ও রিসাইকেল করে তবেই এ দানব থেকে মুক্তি মেলবে।এই ভাস্কর্য নির্মাণে সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছে সৃষ্টিশীল প্রতিষ্ঠান পপ-ফাইভ অ্যাডভারটাইজিং লিমিটেড।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।