বুধবার, ২৩শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

এ কোন অধঃপতন

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিসিএস তথ্য ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা তিনি বিসিএস ক্যাডারের চাকরি ছেড়ে সাব রেজিস্ট্রার পদে যোগদান করেছেন। এ নিয়ে প্রশাসন এবং সরকারের বিভিন্ন মহলে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। তার এই স্বেচ্ছায় পদাবনতি এবং স্বেচ্ছায় ক্যাডারদের চাকরি ছেড়ে দিয়ে সাব রেজিস্টার হওয়াটাকে অনেকে দুর্নীতির জাতীয়করণ বলছেন এবং আমাদের মানসিকতার এক ধরনের অধঃপতন হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে এই বিষয়টিকে।’ উল্লেখ্য যে, গত ১৩ জুন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বেতার-১ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। মোহাম্মদ গোলাম আজম উপসচিব স্বাক্ষরিত এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে যে, বিসিএস তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা জানাব আদনান ফেরদৌস সহকারী বেতার প্রকৌশলী গবেষণা ও গ্রহণ কেন্দ্র, বাংলাদেশ বেতার, ঢাকা, ৪১তম বিসিএসের মাধ্যমে নন ক্যাডার সাব রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ লাভ করেছেন।উক্ত পদে যোগদানের জন্য তার আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে ৫.৬. ২০২৪ তারিখ অপরাহ্ণে বর্তমান পদ হতে অব্যাহতি প্রদান করা হল। বিসিএস তথ্য ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা গেজেটেড অফিসার। তিনি সরকারি চাকরির সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ একটি জায়গায় নিজেকে উত্তীর্ণ করেছিলেন এবং সেখানে তিনি চাকরিও করেছিলেন। কিন্তু তথ্য ক্যাডারে তার আগ্রহ নেই। তিনি ক্যাডার সার্ভিস থেকে নন ক্যাডার সাব রেজিস্ট্রার পদে যোগ দিয়েছেন। কেন একজন ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তা সাব রেজিস্ট্রারের মতো নিম্ন পদে যোগ দিলেন। এর কারণ খুবই স্পষ্ট। তথ্য ক্যাডারের একজন কর্মকর্তার উপরি আয় বা দুর্নীতি করার সুযোগ অনেক সীমিত এবং কম। অন্যদিকে সাব রেজিস্ট্রারদের দুর্নীতির খবর সকলেই জানেন।

একজন সাব রেজিস্ট্রার কী পরিমাণ দুর্নীতিবাজ হয়ে উঠতে পারে তার বিভিন্ন নজির রয়েছে।’ সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনও সাব রেজিস্ট্রারদের দুর্নীতি নিয়ে অভিযান পরিচালনা করছেন। এরকম বাস্তবতায় এই আদনান ফেরদৌস যে উপরি আয়ের লোভেই সাব রেজিস্ট্রার পদে যোগ দিয়েছেন তা বলাই বাহুল্য। কারণ তথ্য ক্যাডারের একজন কর্মকর্তার প্রধান তথ্য কর্মকর্তা পর্যন্ত পদোন্নতির সুযোগ আছে। তিনি একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর ইন ক্যাডার হতে পারেন। অর্থাৎ প্রশাসন ক্যাডারে আসতে পারেন।

সেখান থেকে তিনি উপসচিব, যুগ্মসচিব হয়ে সচিবও হতে পারেন। এরকম উদাহরণ অনেক রয়েছে। সাবেক তথ্য কর্মকর্তা কামরুন নাহার সচিব হয়েছিলেন। নাজমুল হুদা তথ্য ক্যাডার কর্মকর্তা থেকে সচিব হয়েছেন। এ রকম উদাহরণ অনেক দেওয়া যায়। কিন্তু একজন সাব রেজিস্ট্রারের পদোন্নতির পথ খুবই সীমিত। তিনি জেলা রেজিস্ট্রার হতে পারেন এবং এর পরে তার যে পদোন্নতি গুলো সেগুলো খুবই সঙ্কীর্ণ। আর সবচেয়ে বড় কথা হল যে, মর্যাদার দিক থেকে একজন তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তার মর্যাদা সাব রেজিস্ট্রারের অনেক বেশি।

এত কিছুর পরেও এই তরুণ সাব রেজিস্ট্রারের পদে নিম্নগামী হলেন তার প্রধান কারণ অবশ্যই বাড়তি আয়ের লোভ। তরুণদের মধ্যে যে নীতি নৈতিকতা এবং মর্যাদাবোধ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে এবং লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এই একটি ঘটনা তার প্রমাণ। এরকম বহু উদাহরণ আছে যেখানে একজন সাব রেজিস্ট্রার বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ক্যাডারভুক্ত হয়েছেন। এরকম কর্মকর্তারা এখনও প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে একজন ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তা সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে স্বেচ্ছায় পদাবনতি নেবেন এটি বিস্ময়কর বটে। এর ফলে আমাদের সমাজের যে চিন্তা চেতনা এবং মানসিকতা দুর্নীতিগ্রস্ত তার একটি দৃষ্টান্ত সবার সামনে উন্মোচিত হয়েছে।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।

----- সংশ্লিষ্ট সংবাদ -----

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়