নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২০ সাল, যখন করোনা শুরু হয়েছিল তখন দেশে প্রাথমিকে মোট শিক্ষার্থী ছিল ২ কোটি ১৫ লাখের বেশি; কিন্তু ২০২১ সালে তা সাড়ে ১৪ লাখের বেশি কমে গিয়েছিল। তখন সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ বলেছিলেন, করোনায় সংক্রমণের পরিস্থিতির কারণে এমনটি হতে পারে। করোনা কমে এলে পরের বছর (২০২২) শিক্ষার্থী আবারও বেড়ে যায়; কিন্তু এখন করোনার সংক্রমণ প্রায় নেই বললেই চলে। তাতেও দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালে দেশে প্রাথমিকে মোট শিক্ষার্থী ২০২২ সালের চেয়ে ৮ লাখ ৩২ হাজারের বেশি কমে গেছে।যদিও এক বছরের ব্যবধানে দেশে প্রাথমিক স্তরে বিদ্যালয়ের সংখ্যাও কিছু বেড়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের করা ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয়শুমারিতে (এপিএসসি') এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত মাসে প্রকাশ করা হয়েছে এই শুমারি প্রতিবেদন। এতে বিগত কয়েক বছরের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ঝরে পড়ার হার ধারাবাহিকভাবে কমছে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতও কমেছে। ২০২৩ সালের শুমারির তথ্য বলছে, আগের বছরের চেয়ে এখন মোট বিদ্যালয় বেড়েছে ৯১টি।দেশে এখন মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৩০টি। এর মধ্যে সরকারি ৬৫ হাজার ৫৬৭টি, যা আগের বছর ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৩৯টি। এসব বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া মোট শিক্ষার্থী ১ কোটি ৯৭ লাখের বেশি, যা আগের বছর ছিল প্রায় ২ কোটি সাড়ে ৫ লাখ। মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে প্রায় এক কোটি এক লাখ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমার পেছনে জন্মসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমতে থাকা একটি কারণ হতে পারে বলে মনে করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব ফরিদ আহাম্মদ। কমছে ঝরে পড়ার হার এবার ঝরে পড়ার হার ১৩ শতাংশের সামান্য বেশি, যা আগের বছর ছিল প্রায় ১৪ শতাংশ। আর ২০২০ সালে এই হার ছিল ১৭-এর মতো।
শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঝরে পড়া কমার ক্ষেত্রে উপবৃত্তি বড় ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে প্রাথমিকে প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পায়। এর মধ্যে প্রাক্-প্রাথমিকের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মাসে ৭৫ টাকা ও প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী ১৫০ টাকা পায়। এ ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে (ছয় শতাধিক') ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা মাসে ২০০ টাকা করে পায়। অবশ্য শিক্ষার্থীপিছু উপবৃত্তি ন্যূনতম ৫০০ টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছে গণসাক্ষরতা অভিযানসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি।
কমেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এ বলা হয়েছিল, প্রাথমিকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত হবে ১: ৩০। প্রাথমিক বিদ্যালয়শুমারির তথ্য বলছে, বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এই অনুপাত তার চেয়ে এখন কম, যা ইতিবাচক। দেশে এখন গড়ে ২৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক আছেন। ২০২২ সালেও গড়ে ৩৩ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক ছিলেন। আর তার আগের বছর গড়ে ৩৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য ছিলেন ১ জন শিক্ষক। প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে প্রাথমিকে অনেক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মোট শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৫১৩ জন। তাঁদের মধ্যে নারী শিক্ষক ৬৫ শতাংশের মতো।' শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, বিদ্যালয়গুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষক পদায়ন করে তাঁদের ঠিকমতো কাজ লাগাতে পারলে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানো সম্ভব। বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কিন্ডারগার্টেন আছে ২৬ হাজারের বেশি।
অবশ্য কিন্ডারগার্টেনগুলোর অধিকাংশই নিবন্ধনের আওতায় নেই। এগুলোকে এক বছরের মধ্যে নিবন্ধন ও শিক্ষাবিষয়ক (একাডেমিক) স্বীকৃতির আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষার্থী কমার পেছনে ৩ কারণ এক বছরে প্রাথমিকে শিক্ষার্থী ৮ লাখ ৩২ হাজারের বেশি কমার পেছনে প্রধানত তিনটি কারণের কথা বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তাপস কুমার বিশ্বাস। তাঁর মতে, প্রথমত, শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মাদ্রাসাশিক্ষায় ঝুঁকেছে, আরেকটি অংশ ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়ে গেছে। এ ছাড়া কিছুটা অর্থনৈতিক চাপে কিছু শিক্ষার্থী স্কুল ছেড়ে শ্রমে নিয়োজিত হয়েছে।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2024 সংবাদের আলো. All rights reserved.