খালেক পারভেজ লালু, উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ অগ্রাহ্য করে প্রতিপক্ষের লোকজন ভূমি দস্যুদের নিয়ে রাতের আঁধারে প্রায় এক একর জমির পাকা আমন ধান কেটে নিয়ে গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে, গত মঙ্গলবার রাতে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তী দুর্গম কর্পুরা চাপরার পাড় গ্রামে। এ ব্যাপারে থানায় ৫৪ ব্যক্তিকে আসামি করে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হলেও লুট করে নেয়া ধান কিংবা অভিযুক্ত কাউকেই পুলিশ গ্রেফতার করতে পারিনি।
এদিকে, রাতের আঁধারে জমি থেকে পাকা ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাপরার পাড় গ্রামের মানুষজনের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনার এক সপ্তাহ আগে দুর্বৃত্তরা জমির মালিক মিজানুর রহমানের বাড়িতেও হামলা চালায় এবং ঘরবাড়ি সহ আসবাবপত্রের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে।
অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, ঘটনার দিন মঙ্গলবার(১৬ অক্টোবর) আনুমানিক রাত দশটার দিকে প্রতিপক্ষ গ্রুপ শফিকুলের নেতৃত্বে ৫০/৬০ জনের একদল ভূমি দস্যু দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তিস্তা নদী তীরবর্তী চাপরার পাড় গ্রামের মিজানুর রহমানের মালিকানাধীন এক একর জমির প্রায় ৮০ মন পাকা আমন ধান জমি থেকে কেটে নিয়ে যায়। এর আগে ভূমিদস্যুরা জমির চতুর্দিকে দাঁড়িয়ে পাহারা বসায়। এরপর ধান কেটে শফিকুল এর বাড়িতে নিয়ে যায়, সেখানে মাড়াই করে বস্তা ভর্তি করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শী জানায়।
এ সময় ভূমিদস্যুরা বাদীকে উদ্দেশ্য করে হুমকি দিয়ে বলে,"এই জমি আমাদের এখানে আসলে মামলা মোকদ্দমা করলে তোমাকে জমিতেই মেরে কবর দেয়া হবে" এ অবস্থায় বাদি পক্ষের লোকজনের মধ্যে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
সরোজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, বাদী মিজানুর রহমান নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত দোতরফা সূত্রে দীর্ঘ আইনি লড়াই করে বিরোধপূর্ণ জমিতে মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেন । এরপর আদালতের নির্দেশ মোতাবেক বাদি মিজানুর রহমানকে জমির ছাহামকৃত অংশ সিভিল কোর্ট কমিশনার নিয়োগের মাধ্যমে গত ১৯/১১/২০১৭ তারিখ আদালত বুঝিয়ে দেন। তখন থেকে যথারীতি বাদী তার জমি নিজের দখলে রেখে চাষবাস করছেন। এ অবস্থায় সম্প্রতি এলাকার ভূমিদস্যুরা বাদী মিজানুর রহমান ও তার লোকজনের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করতে থাকেন । তারা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে,বেশ কিছুদিন থেকে ভূমি দস্যুরা বাদীর বাড়িঘর ভাঙচুর ও ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছিল বলে মিজানুর জানায়।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ মিজানুরের বাড়িতে ভূমি দস্যুরা ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে সেখানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এ সময় বাড়ির লোকজন কোন রকমে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পায়। লোকজন বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার সুযোগে প্রতিপক্ষরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গত মঙ্গলবার রাতে এক একর জমির পাকা আমন ধান কেটে নেয়। এতে করে প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মিজানুর রহমান জানায়। আমন মৌসুমের শুরুতেই জমি থেকে ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় দুর্গম চরাঞ্চলের কৃষক কুলে বেশ ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ধান কাটার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বর্তমানে গ্রামটিতে চরম উত্তেজনরা বিরাজ করছে। যেকোনো সময়ে সেখানে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে গ্রামের অনেকেই।
এদিকে অভিযুক্ত শফিকুল গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করা হলে,শফিকুল ইসলাম আনুমানিক ৭০ শতাংশ জমির ধান কেটে নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এখানে প্রায় ৩৬.৩১ একর জমি সরকারি ১ নং খাস খতিয়ানে রয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষরা লিজ গ্রহণের মাধ্যমে বসবাস করে আসছিল। সেই ধারাবাহিকতায় আমরাও সেখানে বসবাস করে আসছি। এখানে মিজানুর কিভাবে জমির মালিক হলেন সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। একই ধরনের কথা বললে,মোহাম্মদ আব্দুল হাই, আবির উদ্দিন,সাবলু মিয়া, আজিজুর রহমান, আব্দুর রাজ্জাক। তারা এসব জমিকে খাস খতিয়ানভুক্ত বলে দাবি করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার( উলিপুর সার্কেল) মহিবুল ইসলাম জানান, এ সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া গেছে, দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2024 সংবাদের আলো. All rights reserved.