সংবাদের আলো ডেস্ক: সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নিলে গত ১৮ জুলাই রাতে সব ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয় সরকার। এতে দেশের ব্যাংক খাতসহ ইন্টারনেট অবকাঠামোভিত্তিক সব সেবাই বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়েছে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে। এমন পরিস্থিতিতে ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের বিকল্প মাধ্যম খুঁজছে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এই বিকল্প মাধ্যম ব্যবহার করে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার পরও সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা দেওয়া যাবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের এক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তথ্য বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বড় কোনো আন্দোলন জন্ম নিলেই বন্ধ করা হচ্ছে ইন্টারনেট। এতে ইন্টারনেটভিত্তিক সব সেবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে, ব্যাংকিং সেবায় বড় বিঘ্ন দেখা দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইন্টারনেটের বিকল্প হিসেবে অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে ভাবতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরামর্শ দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এই বিকল্প খুঁজে বের করার আগে ইন্টারনেট বন্ধ হলে ম্যানুয়ালি ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানোর বিষয়েও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গত ১৮ থেকে ২৩ জুলাই ইন্টারনেট ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকের প্রায় সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরামর্শে বিকল্প নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিভাগ। এরই মধ্যে তারা এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনার প্রস্তুত করেছে, যা দ্রুত গভর্নরের কাছে দেওয়া হবে। এর পরই সরকারের মাধ্যমে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করবে আর্থিক খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সাধারণত আন্দোলন শুরু হলে সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে। এর মাধ্যমে সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করতে চায়। কিন্তু আমাদের সব ধরনের ইন্টারনেট ব্যবস্থা একই ধারায় চলে। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করতে ইন্টারনেট বন্ধ করলেই সব ধরনের পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। তাই আমরা বিকল্প নিয়ে কাজ শুরু করেছি।
তথ্য বলছে, দেশে ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। বিভিন্ন সময় আন্দোলন দমন বা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে ইন্টারনেট সেবা বিশেষত মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এবার ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও বন্ধ করা হয়েছিল। ২০২৩ সালে বিরোধী দলের আন্দোলন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদে আন্দোলন ও ২০১৮ সালের আগস্টে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন দমনেও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়ার নজির রয়েছে। নিউইয়র্কভিত্তিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান অ্যাকসেস নাউ গত মে মাসে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা বন্ধ তথা ইন্টারনেট শাটডাউন নিয়ে একটি ডাটাবেজ প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে তিনবার বন্ধ করা হয় ইন্টারনেট সেবা। ওই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১তম, আর ২০২২ সালে পঞ্চম। সে বছর দেশে ছয়বার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়। এ ছাড়া ২০২১ সালে দুবার ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংক এমডিদের বৈঠক শেষে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বিকল্প নিয়েও চিন্তা করতে হবে। আমরা উন্নত দেশ হওয়ার আগেই ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগুলোর জন্য আলাদা সার্ভিস লাইন থাকা প্রয়োজন। কারণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর ব্যাংক একই লাইনে চলবে, এটা হওয়ার কথা নয়। আমাদের এমন লাইন করা দরকার—যেন ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেলেও ব্যাংকের কার্যক্রম চলে। সেক্ষেত্রে ব্যাংকের জন্য ব্রডব্র্যান্ডের মতো আলাদা লাইন গড়ে তোলা দরকার।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে আমাদের কিছু এটিএম ছাড়া অনেক সেবা বন্ধ ছিল। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে কথা হয়েছে। এখনই আমাদের বিকল্প নিয়ে ভাবতে হবে। প্রয়োজনে আমাদের ম্যানুয়ালি ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানোর বিষয় নিয়েও চিন্তা করা দরকার।
এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আমাদের রেমিট্যান্সে কিছুটা প্রভাব পড়েছিল। ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার পর তা অনেকটাই পুনরুদ্ধার হয়েছে। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ থাকা অবস্থায় ব্যাংকিং কার্যক্রম কি হবে, তা নিয়ে ভাবতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সেই বিষয়ে ভাবছে। তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের জানাবে।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2024 সংবাদের আলো. All rights reserved.