রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আয়া থেকে শতকোটি টাকার মালিক ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তা রানী

সংবাদের আলো ডেস্ক: স্বামী মারা যাওয়ার পরে দিকবিদিকশুন্য হয়ে পড়েন মুক্তা রায়। চাচাতো ভাই দুলালের মাধ্যমে আয়া পদে চাকরি শুরু করেন সিভিল সার্জন অফিসে। চাকুরিরত থাকা অবস্থায় সংখ্যতা গড়ে ওঠে সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের সাথে। তারপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। চার বছর চাকরি করে ছেড়ে দেন সেই চাকরি। মুক্তা রায় থেকে হয়ে ওঠেন মন্ত্রী-এমপির ২য় বউ খ্যাত মুক্তা সেন। শুরু হয় মুক্তা সেনের কোটিপতি হবার উত্থান।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের চকহলদি গ্রামের বাসিন্দা মুক্তা সেন। কোর্টে মুহুরি হিসেবে কর্মরত ছিলেন তার স্বামী। যা আয় হত তা দিয়ে সংসারে সবসময় ছিল টানাপোড়েন। স্বামী মারা যাওয়ার পরে দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আয়া পদে চাকরি নিয়েছিলেন তিনি। পরে আয়া পদ থেকে চাকরি ছেড়ে নজর দেন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হাসপাতালের কেনাকাটা, খাবার, আউটসোর্সিং-এ নিয়োগ বাণিজ্য করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া শুরু। তারপর থেকে হাসপাতালের সব নিয়ন্ত্রণে নিয়ে হয়ে ওঠেন হাসপাতালের রাণী মুক্তা সেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট, কার রেন্ট এ সেন্টার এর শো-রুম, ঠাকুরগাঁও পৌরশহরের ইসলামবাগে দুই তলা বাড়ি, শান্তিনগরে দুই জায়গায় প্লট আকারে ৫ শতক করে জমি, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলএসডি গোডাউনের পাশে ১০ শতক জমি, পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও মহাসড়কের পাশে ৩পিএম চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বাদুপাড়ায় বাড়ি- জমি ও সয়াবিন তেলের কারখানা, চন্ডিপুরে জমিসহ বাড়ি, মিল-চাতাল ও পুকুর ২ কোটি ৮ লাখ টাকায় কেনার জন্য ৩০ লাখ টাকা অগ্রীম, আবাদি জমি রয়েছে ২০ বিঘা। সদরের গড়েয়া বাসস্ট্যান্ডে ৮ শতক জমির উপরে বাড়ি। এছাড়াও নিয়োগ বাণিজ্য, জমি দখলসহ নামে-বেনামে সম্পত্তি ও বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হোল্ডার রয়েছেন। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের নওগাঁর অটো রাইস মিল কয়েক কোটি টাকায় কিনেছেন এই মুক্তা সেন।

চলতি বছরে মুক্তা সেনের দুই ছেলে তূর্য ও মাধুর্য এন্টারপ্রাইজ নামে পূবালী ব্যাংক হিসাব নম্বরে লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ৩৮ লাখ ২০৯৯ টাকা। সাবেক মন্ত্রী ও এমপি রমেশ চন্দ্র সেন আটক হওয়ার পর দিন সব টাকা তুলে নিয়ে বর্তমানে রয়েছে ৬ হাজার ৪১৭ টাকা। এছাড়াও জনতা, অগ্রণী ও সোনালী ব্যাংকেও তাদের হিসাব নম্বরে দুই বছরে লেনদেন রয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা।

নিজের আখের গুছিয়ে ক্ষান্ত হননি এই মুক্তা সেন। ভাইদের রাজনীতিতে যুক্ত করে ঠিকাদারি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দেয়া। আর ভাতিজা ভাতিজিদের সরকারি চাকরিও নিয়ে দিয়েছেন এই মুক্তা সেন।

হত্যা মামলায় ভারতে পলাতক থাকা বড় ভাই নারায়ণ ঠাকুরকে এসে যুক্ত করান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। মন্ত্রীর প্রভাব আর রাজনৈতিক দাপটে তারা হয়ে ওঠেন আরো প্রতাপশালী। তার খালাতো ভাই দুলালকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, খালাতো বোনের ছেলে নিপুণকে হাসপাতালের ঠিকাদারি, বোনের মেয়ে মৌকে স্কুলের শিক্ষিকা, আরেক বোনের ছেলে জয়কে ফোর্সসহ রাজস্ব ও আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাকরি দিয়েছেন তার দুই শতাধিক আত্মীয় স্বজনকে।

মুক্তা রায়ের খালাতো ভাই ফণি রায় বলেন, সবাই আমাকে বলে মন্ত্রী আর এমপি নাকি ভগ্নিপতি। আমি বলছি বিয়ে তো খেলাম না। তবে মুক্তার পারিবারিক অবস্থা খারাপ ছিল। শহরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতো। পরে নিজে বাড়ি কিনেছে। আমাদের আত্নীয় স্বজনের চাকরি নিয়ে দিয়েছে। এলাকায় কিছু জমি কিনেছে।

আরেক বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা সবাই তাকে এমপির ২য় বউ হিসেবে চিনতাম। এলাকায় জমি, তার ভাই ও বোনদের সেই সাথে আত্মীয় স্বজনদের চাকরি দিয়েছেন। তাদের বংশের সবার চাকরি হয়েছে। এলাকার স্কুল গুলোতে অনেককে চাকরি দিয়েছে। তার বিনিময়ে টাকা নিয়েছে আবার কারো কাছে জমি নিয়েছে। পাশেই মিল চাতাল পুকুর ২ কোটি ৮ লাখ টাকায় কেনার জন্য ৩০ লাখ গত মাসে অগ্রিম দিয়েছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা নুর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, ২০১০ সালে মুক্তা রায় আয়া পদে যোগদান করেন। পরে ২০১৪ সালে তিনি সেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ঠাকুরগাঁও সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক তাহসীন মুনাবীল হক বলেন, আয় বহির্ভূত সম্পদ উপার্জনের কোন সুযোগ নেই। কেউ এসবে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কয়েক বছর আগেও যার নুন আন্তে পান্তা ফুরিয়ে যেত সেই মুক্তা এখন শত কোটি টাকার মালিক।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।

----- সংশ্লিষ্ট সংবাদ -----

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়