নিজস্ব প্রতিবেদক: ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের পর চোরাচালান এবং আন্ডারওয়ার্ল্ড অশান্ত হয়ে পড়েছেন। ঝিনাইদহ-৪ আসনের এই এমপি নিজেও এক সময় সর্বহারা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সর্বহারা রাজনীতির নামে গলাকাটা, মানুষ হত্যার রাজনীতি ছিল ঝিনাইদহ অঞ্চলে একটি পরিচিত রূপ। পুরো ঝিনাইদহ এই সর্বহারাদের হাতে জিম্মি ছিল। সেখানে মানুষ ছিল নিরাপত্তাহীন।' ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সর্বহারাদের বিরুদ্ধে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করেন। সর্বহারাদের আস্তানাগুলো তিনি চুরমার করে দেন। এর পরপরই আস্তে আস্তে সর্বহারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক অবস্থান থেকে তারা সরে আসে। এই সর্বহারাদের হাতে বিপুল অস্ত্র ছিল এবং প্রায় তারা নিরাপত্তার জন্য ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করতেন।
আর যখন সর্বহারাদের নেটওয়ার্ক ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে ভেঙে দেওয়া হয় তখন এদের অনেকেই চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত হন এবং বিভিন্ন অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়েন। ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনারের সঙ্গেও চোরাচালানের সম্পর্কের কথা অনেকে জানেন। যদিও তিনি এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার এই ব্যবসা বাণিজ্যের বাইরে তিনি মানুষের জন্য প্রচুর উপকার করতেন। কিন্তু যেহেতু তিনি আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং বিভিন্ন চোরাচালান চক্রের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এসেছে, তাতে মনে করা হয় যে আন্ডারওয়ার্ল্ডের দ্বন্দ্ব এবং স্বর্ণ চোলাচালানের দ্বন্দ্বের কারণেই আনার খুন হয়ে থাকতে পারেন। এই খুনের অভিযোগে ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চিহ্নিত করছেন আখতারুজ্জামান শাহিনকে।
চরমপন্থী নেতা আমানুল্লাহ এই কিলিং মিশন বাস্তবায়ন করার জন্য কলকাতায় গিয়েছিলেন বলেও প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণে জানা গেছে। বাংলাদেশের ছয় জন এই মিশনে অংশ নিয়েছিল বলেও এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে বলা হচ্ছে। আনারের মৃত্যুর পর ঝিনাইদহ সহ সারা বাংলাদেশের আন্ডারওয়ার্ল্ড এবং চোরাচালান চক্র অশান্ত হয়ে উঠছে।' বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে, আনার এলাকায় কেমন প্রভাবশালী জনপ্রিয় ছিলেন না, তিনি এই গ্রুপগুলোর একটি অংশের নেতা ছিলেন। তার নেতৃত্বে সেখানে একটি বড় ধরনের চক্র গড়ে উঠেছিল, যে চক্রের সঙ্গে আনারের বাল্যবন্ধু এবং ব্যবসায়িক অংশীদার আকতারুজ্জামান ওরফে শাহীনের দ্বন্দ্ব হয়।
ধারণা করা যায় যে, একটি স্বর্ণ চোরাচালানের টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়েছিল। এই দ্বন্দ্বের ফলে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আর এই হত্যা কাণ্ডের ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর আন্ডারওয়ার্ল্ড এখন অশান্ত হয়ে উঠেছে। চোরাচালান চক্রের বিভিন্ন গ্রুপ গুলো তৎপরতা শুরু করেছে। বিশেষ করে যারা আনারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিল তারা এখন প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। ঝিনাইদহ সহ বিভিন্ন অঞ্চলে একটি অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন সূত্র মনে করছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছেএ রকম তথ্য আছে যে, আনার হত্যার পাশ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে আরও বড় ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটতে পারে।'
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2024 সংবাদের আলো. All rights reserved.