নিজেস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন নেতার ইন্ধনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল আলহাজ মহিউদ্দিন নাসির বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বরখাস্ত হওয়া সাবেক প্রধান শিক্ষক মালেক। তার বিরুদ্ধে বেতন বোর্ড ফি, খাত উল্লেখ না করে ইচ্ছা মতো অর্থ ব্যয় দেখানো, সরকারি প্রজ্ঞাপন না মেনেই তিনি নিজেই ঋণ গ্রহণ করেছেন, এমনকি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পর্দা গ্রহণে বাঁধা প্রদান করতেন। এসব অভিযোগে বরখাস্ত হলেও ২০ দিনের মাথায় আবারও বহালের চেষ্টায় (বিএনপির নেতাদের দিয়ে) তদবির চালাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিদ্যালয়ে তথ্যানুসন্ধানে গিয়ে শুরুতেই শিক্ষিকা মীনা পারভীন জানান, কিছু সমস্যা ছিল প্রধান শিক্ষকের। যা মিটমাট হয়ে গেছে। অথচ শিক্ষিকা মিনা পারভীনের নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে নানা সময়ে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠলেও প্রধান শিক্ষক মালেক আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডার ব্যবহার করে বহাল তবিয়তে চাকরি করে গেছেন। এতে ভয়ে কেউ মুখ খুলেনি। তার অত্যাচারে স্কুলের কমিটি, শিক্ষক, পিয়ন এমনকি ছাত্রীরাও বাদ যায়নি। ছাত্রীদের পর্দা করতে বাধা প্রদান করত বলে একাধিক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রয়েছে।
বিদ্যালয় কমিটির রেজুলেশন সূত্রে জানা যায়,
প্রধান শিক্ষক মালেকের নানা অনিয়ম ও অর্থ কেলেঙ্কারি নিয়ে গত ২৭ মে তারিখে মিটিং হয়। এতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট নিরীক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়। এর আলোকে ১২ ও ১৩ জুন বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ২০২৩ সালের নিরীক্ষণ কাজ সম্পন্ন করে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আহ্বায়ক নোমান ইবনে নাসির, বিশ্বজিৎ সরকার ও মীনা পারভীনের স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে ভর্তি ও সেশন ফি, ফরম ফিলাপ ও প্রশংসা পত্র বাবদ ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা অনিয়ম করেছেন।
এর আলোকে ১৯ আগষ্ট বিদ্যালয়ে মিটিং অনুষ্ঠিত হয়, অনুষ্ঠানের রেজুলেশন সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ভর্তি ও সেশন ফি, ফরম ফিলাপ ও প্রশংসা পত্র বাবদ হিসাবের অসংগতি থাকায় ১ মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করা হয় প্রধান শিক্ষক মালেকে। সেই সাথে আরও তিন বছরের হিসাব নিরীক্ষণের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে দ্রুত প্রতিবেদনের জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এবিষয়ে নিরীক্ষণের দায়িত্ব থাকা শিক্ষক বিশ্বজিৎ সরকার জানান, আমরা গত ২৪ আগষ্ট আরও তিন অর্থ বছর। অর্থাৎ ২০২০, ২০২১ এবং ২০২২ নিরীক্ষণ কাজ সম্পন্ন করেছি। ২০২৩ সালের চেয়ে অবস্থা আরও ভয়াবহ। সব মিলিয়ে প্রায় ৬ লাখ ৩৯ হাজার টাকার অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। তিনি আরও জানান, তিনি প্রজ্ঞাপন না মেনে ৪০ হাজার টাকা স্কুল থেকে ঋণ নিয়েছেন, তিনি শিক্ষদের নামে বেনামে টাকা তুলেছেন, তিনি প্রশ্ন ছাপানোর নাম করে প্রায় লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। যা আদৌও কোনো খরচাপাতি হয়না। এছাড়া কোনো কিছু উল্লেখ না করেই ব্যয় দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যা তদন্ত নিরীক্ষণ দ্বারা প্রমাণিত।
২০২৩ সালের ভর্তি ও সেশন ফি, ফরম ফিলাপ ও প্রশংসা পত্র বাবদ ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা অনিয়ম বিষয়ে বরখাস্ত হওয়া সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেকের কাছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি জানান, এই অভিযোগ গুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি অত্যাচারের শিকার, আমাকে জোর করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিতে চেয়েছিল, আমি দেইনি। আমার জীবনের হুমকি হয়ে গিয়েছিল ঐখানে। এ কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে আলহাজ মহিউদ্দিন নাসির বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, ওনি বিদ্যালয়ে রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে নানা অনিয়ম করেছেন। ওনি স্কুল ভবন বিক্রি গাছ বিক্রিসহ নানা ধরনের অপকর্ম করেছেন। যা এখন ধীরে ধীরে সব প্রমাণিত। আমরা সভাপতি মহাদয় ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্যারের সঙ্গে কথা বলে ওনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এলিজা সুলতানা জানান, যেহেতু প্রধান শিক্ষক মালেক বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছে। অনিয়মের বিষয় গুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সামনে তদন্ত হবে , এরপর তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, এ পর্যন্ত বরখাস্ত বহাল থাকবে।
বিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত সভাপতি ইউএনও মনোয়ার হোসেন জানান, সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির পর আমি কয়েক দিন ধরে সভাপতি নিযুক্ত হয়েছি। যেহেতু আমি আসার পূর্বেই বরখাস্ত হয়েছে। তার বিষয়ে এখনো আমার কাছে অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।