রবিবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

টাঙ্গাইলে পলিথিন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা মানছেনা ছয় ব্যবসায়ীর জরিমানা

জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপার্টার: দেশে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও টাঙ্গাইলের ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে তা মানার গরজ নেই। রবিবার (৩ নভম্বর) শহরের সন্তষ বাজারে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার করায় ছয় ব্যবসায়ীকে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা ও ৪৪ কেজি পলিথিন জব্দ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট ফারজানা আক্তার ও মোহাইমিনুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই অভিযান চালায়। তারপরেও জেলার বাজারগুলোতে পলিথিনের যথেচ্ছ ব্যবহার লক্ষ করা যায়।

জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার ও মোহাইমিনুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানোকালে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তুহিন আলম, সদর উপজেলা স্যানেটারী ইন্সপেক্টর ও খাদ্য পরিদর্শক সাহেদা বেগমসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, সরকার পলিথিনবিরোধী আইন করে তা বাস্তবায়ন ক্যাম্পেইন করে। সর্বশেষ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ নেভম্বর (শুক্রবার) থেকে বাজারে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। এ লক্ষে বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

রবিবার সরজমিন টাঙ্গাইলের পাইকারীর বড় বাজার পার্ক বাজার, সিটি বাজার, ছয়আনী বাজার, আমিন বাজার, সাবালিয়া বাজার, সাবালিয়া চার রাস্তার মোড় বাজার, বাসস্ট্যান্ড বাজার, বল্যা বাজার, বেবীস্ট্যান্ড বাজার, কলেজগেট বাজার ঘুরে জানা যায়- ক্রেতা-বিক্রেতারা পলিথিনের বিকল্প সামগ্রী সহজলভ্য না হওয়ায় হঠাৎ করে নিয়ম মানতে আগ্রহী হচ্ছেন না। বিভিন্ন বাজার ও শপিং মলগুলোতে এখনও পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে।

ব্যবহারকারীরা জানায়, পলিথিনের পরিবর্তে পাট বা কাপড়ের ব্যাগ অথবা পরিবেশবান্ধব ব্যাগ ব্যবহার করা যায়। কিন্তু সেগুলো সব সময় সঙ্গে রাখা যায়না কিংবা কেনার অভ্যাস এখনও ব্যাপকভাবে গড়ে উঠেনি। পাটের না হলেও বিকল্প এক ধরনের ব্যাগ পাওয়া যায়। তবে তার দাম সাধারণ পলিথিনের তুলনায় কিছুটা বেশি হওয়ায় ক্রেতা সাধারণের আগ্রহ কম। এছাড়া সেগুলোর অধিকাংশই পশ্চিমা দেশে রপ্তানি পণ্য হিসেবে বিবেচিত।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানায়, শহর এলাকার বজ্যপদার্থের একটা বিরাট অংশ হচ্ছে পলিথিন বা প্লাস্টিক। উপাদানগত দিক থেকে এই পলিব্যাগগুলো মানুষ ও অন্যান্য প্রাণির পরিবেশ ও আবহাওয়ার জন্য ক্ষতিকর। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিণত হয় বাতাসে, পানি ও খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে।

এই অনুপ্রবেশের ফলে দীর্ঘমেয়াদ ফুসফুস ও কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরির উপকরণগুলোর মধ্যে বিসফনেল এ (বিপিএ) ও ফ্যালটেসের মতো রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এগুলো হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, শ্বাসকষ্ট, প্রজনন সমস্যা ও ক্যানসোরের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য জটিলতার সৃষ্টি করে। এ ব্যাগগুলো যখন পোড়ানা হয় তখন ডাইঅক্সিন ও ফুরানের মতো অত্যন্ত বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গত হয়। এগুলো বায়ু দূষণের মধ্যে দিয়ে শ্বাসযন্ত্রক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- জেলায় ১০-১২টির বেশি পলিথিন মজুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ইতোপূর্বে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হলেও পলিথিন মজুদ ও বিক্রি বন্ধ করা যায়নি।

জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার ও মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার ও মূল্য তালিকা না থাকায় সন্তষ বাজারের ছয় ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। এরমধ্যে ব্যবসায়ী মনোরঞ্জন ও মো. আলমগীরকে পাঁচ হাজার টাকা করে; মো. আলিম, দীপক ও মো. রানাক দুই হাজার টাকা করে এবং দীপকের ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তা অধিকার ও পরিবেশ আইন তাদেরকে জরিমানা করা হয়েছে। অন্য ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতাদের নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারে সতর্ক করা হচ্ছে।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।

----- সংশ্লিষ্ট সংবাদ -----